বৃহস্পতিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ওরা ডিবি পরিচয়ে অপহরণ করত

নিজস্ব প্রতিবেদক

ওরা ডিবি পরিচয়ে সাধারণ মানুষকে উঠিয়ে নিত। অমানুষিক নির্যাতন করে আদায় করত মুক্তিপণ। আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য নির্যাতনের ভিডিও করে পাঠাত ভিকটিমের স্বজনদের কাছে। আসল গোয়েন্দা পুলিশের মতোই এসব ভয়ংকর অপরাধীদের গায়ে থাকে ডিবির জ্যাকেট, পিস্তল, হ্যান্ডকাফ, কোমরে ঝোলে আইডি কার্ড। নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী নজরুল অপহরণের অভিযোগ পেয়ে এমনই একটি চক্রের ৫ সদস্যকে গতকাল ভোরে গাজীপুর মহানগরীর পুবাইল থানাধীন মীরেরবাজার তালটিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকার রানা সিএনজি স্টেশনের সামনে থেকে গ্রেফতার করেছে এলিট ফোর্স র‌্যাব। তারা হলেন- রিপন সরদার, আহমেদুল কবির খান কাজল, মোসলেম উদ্দিন বাপ্পি, মোহাম্মদ আসলাম ও রশিদ চাকলাদার। তাদের কাছ থেকে দুটি ডিবি জ্যাকেট, দুটি  খেলনা পিস্তল, একটি হ্যান্ডকাফ, ১১টি মোবাইল ফোন, একটি প্রাইভেট কার ও নগদ ২৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাব-১ অধিনায়ক লে. কর্নেল মোমেন বলেন, ২৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় পিস্তলসহ লুৎফর রহমান নামে এক ব্যবসায়ীকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছয়-সাতজন জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। গাড়িতে ওঠানোর পর লুৎফর রহমানের চোখ-মুখ  বেঁধে ফেলা হয়। এ সময় তার কাছে থাকা মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে  নেয় প্রতারকরা। পরে গাড়ির ভিতরে ওই ব্যবসায়ীকে উপর্যুপরি কিল-ঘুসি মারতে থাকে। অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে লুৎফরকে বলা হয়, ‘তোকে মুন্সীগঞ্জ বিলে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে এসেছি, আমাদের ১০ লাখ টাকা না দিলে তোকে জানে  মেরে ফেলব।’

র‌্যাব জানায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশভূষা ধারণ করে চক্রটি  দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অপহরণ, ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যা, খুনসহ নানা অপরাধ করছিল। নিজেদের ডিবি পুলিশের সদস্য হিসেবে উপস্থাপন করতে ডিবির জ্যাকেটের মতো জ্যাকেট ব্যবহার, ওয়াকিটকি ও অস্ত্র বহন করত। এ ছাড়া নিজেদের ডিবি পুলিশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা  করতে ডিবির স্টিকার তৈরি করে তা মাইক্রোবাস বা বিভিন্ন গাড়িতে ব্যবহার করে আসছিল। র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক বলেন, ভুক্তভোগী এ চক্রের সদস্যদের কাছে প্রাণভিক্ষা চান। পরদিন রাতে (২৬ নভেম্বর) অপহৃত ব্যবসায়ীকে একটি বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ফোন করে তার ছেলেকে বলা হয়, ‘তোমার বাবাকে আমরা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আটক করেছি। বর্তমানে তোমার বাবা আমাদের ঢাকার মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে আছে। আমাদের টাকা দিলে আমরা তোমার বাবাকে ছেড়ে দেব।’ তিনি বলেন, ‘জিম্মি ব্যবসায়ী লুৎফরকে গ্রেফতার করে মোসলেম উদ্দিন বাপ্পির বাসায় নিয়ে উপর্যুপরি মারধরসহ বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়। এ সময় ভুক্তভোগীর পরিবার ৫ লাখ টাকা দিতে রাজি হয়। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভুক্তভোগীর ছেলে বিকাশ ও নগদের মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে ১ লাখ টাকা পাঠান। পরে আরও টাকার জন্য পুনরায় চোখ-মুখ বেঁধে নির্যাতন করে  সেই ভিডিও পরিবারকে পাঠানো হয়। মুক্তিপণ দেওয়া না হলে তাকে (লুৎফর)  মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারটি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। পাশাপাশি র‌্যাব-১-কে বিষয়টি জানালে অপহরণকারী চক্রের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব-১ অধিনায়ক বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাক বিক্রির ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম আছে। এগুলো বাইরের সাধারণ কারও কাছে বিক্রি করা নিষেধ। এসব নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের সঙ্গে আমরা অবশ্যই যোগাযোগ করব, যাতে এগুলো বিক্রি বন্ধ হয়। আশা করছি এগুলো বন্ধের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট যেসব কর্তৃপক্ষ আছে তারা সিদ্ধান্ত নেবে। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ব্যক্তিরা জানিয়েছে, তারা অপহরণকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। পরস্পর যোগসাজশে ডিবি পরিচয়ে দীর্ঘদিন নারায়ণগঞ্জ ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ মানুষকে হয়রানি করত। সাধারণ মানুষকে টার্গেট করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে প্রাণনাশের হুমকি, শারীরিক নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায় করে আসছিল তারা।’

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর