করোনা মহামারীর প্রভাবে বাংলাদেশের মানুষের আয় কমেছে, চাকরির বাজার খারাপ হয়েছে। দেশে আয়বৈষম্যও বেড়েছে। কভিডের কারণে বেশ কয়েক ধরনের প্রভাব পড়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রভাব, শ্রমবাজারে অস্থিরতা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পতন, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য খাতে উদ্বেগ এবং শিক্ষা খাতের চ্যালেঞ্জ।
গতকাল মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরম আয়োজিত দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে এসব কথা বলেন এই প্ল্যাটফরমের আহ্বায়ক ও বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য। ‘মহামারী থেকে উত্তরণের পথে বাংলাদেশ : অভিজ্ঞতা অর্জন ও নীতি প্রণয়ন’ শিরোনামের এ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। সভাপতিত্ব করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। বক্তব্য দেন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জি, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, নাগরিক প্ল্যাটফরমের সমন্বয়ক আনিসাতুল ফাতেমা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্যরে দেওয়া বক্তব্যের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারীতে বাংলাদেশের মানুষের আয়বৈষম্য বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে তা কমাতে সরকার অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা আমাদের দেশের দারিদ্র্য বিমোচন লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে যাইনি। আমরা বৈষম্য লালন করি না, কমানোর চেষ্টা করছি। আমরা অস্বীকার করছি না, বাংলাদেশে দারিদ্র্য কিছু বেড়েছে। তবে করোনাভাইরাসের পর আমরা এ অঞ্চলের ১০টি রাষ্ট্রের মধ্যে প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে এগিয়ে ছিলাম।’ সরকারের কাজে প্রতিনিয়ত দেশি-বিদেশি বাধা আসছে মন্তব্য করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘যারা বাধা দিচ্ছে, তাদের এজেন্ডা আছে। আমাদেরও এজেন্ডা আছে। আমাদের এজেন্ডা খুব পরিষ্কার- দারিদ্র্য বিমোচন, জীবনমান উন্নয়ন, বাঙালিকে বাঙালি রূপে বাংলায় প্রতিস্থাপন।’ সরকারের জ্বালানি নীতির কথা তুলে ধরে মান্নান বলেন, জ্বালানি হিসেবে কয়লা থেকে দূরে সরার চেষ্টা করছে সরকার। এ জন্য মধ্য মেয়াদে ও দীর্ঘ মেয়াদে কয়লার বিকল্প সন্ধান চলছে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের কাজে প্রতিনিয়ত বাধা আছে। অভ্যন্তরীণ বাধা যেমন আছে, তেমনি বিদেশের বাধাও আছে। যারা বাধা দিচ্ছেন, তাদের নিজস্ব এজেন্ডা আছে। আমাদেরও এজেন্ডা আছে। আমাদের এজেন্ডা হলো দারিদ্র্য বিমোচন ও জীবনমানের উন্নয়ন। এখন বাঙালিদের উপোস থাকার খবর হয় না। ভাতের অভাব থেকে মুক্তি পেয়েছি। নিজের অভিজ্ঞতা বলছি, সুনামগঞ্জের হাওরের লোকজনও কেউ উপোস থাকে না। সেখানে মুরগির দাম ছোট মাছের চেয়ে কম।’ সুলতানা কামাল বলেন, ‘তথ্য-উপাত্তের ক্ষেত্রে এ দেশে নৈরাজ্য আছে। তথ্য-উপাত্তের অভাবে করোনার মধ্যে কোন খাতে কী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা জানি না। তথ্য-উপাত্ত থাকলে নীতি প্রণয়ন সহজ হয়।’
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জি বলেন, স্বাস্থ্যে মাথাপিছু খরচ সারা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে কম, এটি বাড়াতে হবে। কারণ স্বাস্থ্যসেবা নিতে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে বেশি টাকা খরচ হচ্ছে।