বুধবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

পঞ্চম ধাপে উৎকণ্ঠার ভোট আজ

ভোট ডাকাতি ঠেকাতে রাত জেগে পাহারা, অষ্টম ধাপে ইউপি ভোট ১০ ফেব্রুয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদক

পঞ্চম ধাপে উৎকণ্ঠার ভোট আজ

পঞ্চম ধাপে ৭০৭ ইউনিয়ন পরিষদের ভোট গ্রহণ আজ। বিগত চার ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের দিন ব্যাপক সংঘাত-সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনার পর আজকের ভোট নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন ভোটার ও প্রার্থীরা। আজ সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ করা হবে। এরমধ্যে ৪০টিতে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হবে।

এদিকে তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণাকে কেন্দ্র করে সংঘাত-সহিংসতা ঘটছে। এর মধ্যে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় দুই হত্যার ঘটনাসহ একের পর এক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে আতঙ্ক কাজ করছে ভোটারদের মধ্যে। এ জন্য ভোট ডাকাতি ঠেকাতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন ভোটাররা।  এদিকে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় নৌকা সমর্থক গুলিবিদ্ধসহ দুজন আহত হয়েছেন।

পঞ্চম ধাপের ভোটের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ১৯৩ জন। এ ছাড়া এ ধাপের ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন ৩৬ হাজার ৪৫৭ জন প্রার্থী। ভোট সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। মাঠে রয়েছেন পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সদস্যরা। তবে স্থানীয় প্রশাসনের চাহিদার আলোকে কিছু জেলায় অতিরিক্ত বিজিপি মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি অষ্টম ধাপের আট ইউপিতে ভোটের তারিখ নির্দিষ্ট করে গতকাল নতুন তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ইসির উপসচিব আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৬ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন, বাছাই ১৭ জানুয়ারি, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৪ জানুয়ারি এবং ভোট গ্রহণ ১০ ফেব্রুয়ারি।  

গতকাল ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনী মালামাল পাঠিয়েছে ইসি। সোমবার মধ্যরাতে এসব নির্বাচনী এলাকায় প্রচারের সময় শেষ হয়েছে। নির্বাচনী প্রচার শেষেও গভীর রাতে বিভিন্ন এলাকায় সংঘাত-সহিংসতা হয়েছে। চার ধাপের ইউপি ভোটে সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৯৬ জন মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে মাঠে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ভোটের পরও তারা থাকবেন। সেই সঙ্গে মাঠে রয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেটও।

পঞ্চম ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন মোট ১৯৩ জন জনপ্রতিনিধি। এর মধ্যে চেয়ারম্যান ৪৮, সংরক্ষিত সদস্য ৩৩ এবং সাধারণ সদস্য ১১২ জন। মোট প্রার্থী সংখ্যা ৩৬ হাজার ৪৫৭ জন। চেয়ারম্যান ৩ হাজার ২৭৪ জন, সংরক্ষিত সদস্য ৭ হাজার ৯৫০ এবং সাধারণ সদস্য ২৫ হাজার ২৩৩ জন। মোট ভোট কেন্দ্র ৭ হাজার ১৩৭টি। ভোটকক্ষ ৩৯ হাজার ৩৯১টি। এ ধাপে মোট ভোটার সংখ্যা ১ কোটি ৪২ লাখ ২০ হাজার ১৯৫। এরমধ্যে নারী ভোটার ৬৮ লাখ ৩৬ হাজার ৩১ ও পুরুষ ৭০ লাখ ৬০ হাজার ১৪০ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ২১ জন ভোটার রয়েছেন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। তবে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটে না থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দলের নেতা-কর্মীরা অংশ নিচ্ছেন। ইউপি ভোটকে কেন্দ্র করে কিছু নির্বাচনী এলাকায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি সামলে রাখতে নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন এবং নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে। পাশাপাশি সব পক্ষের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ইউপি প্রথম ধাপে গত ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর এবং দ্বিতীয় ধাপে ১১ নভেম্বর, তৃতীয় ধাপে ২৮ নভেম্বর, চতুর্থ ধাপে ২৬ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ হয়। এ ছাড়া আজ পঞ্চম ধাপে ৭০৭ ইউপিতে এবং আগামী ৩১ জানুয়ারি ষষ্ঠ ধাপে ২১৯ ইউপিতে ও সপ্তম ধাপে ১৩৮ ইউপিতে ৭ ফেব্রুয়ারি এবং অষ্টম ধাপে ১০ ফেব্রুয়ারি আট ইউপিতে ভোট হবে।

ভোটের ১০ দিন পর নদীতে ব্যালট পেপারের বস্তা : নাটোরের সিংড়ায় ভোট গ্রহণের ১০ দিন পর সিল মারা ব্যালট পেপার উদ্ধার করেছে এলাকাবাসী। গতকাল সকাল ৯টায় উপজেলার চামারী ইউনিয়নের বিলদহর মরা নদীতে বস্তাবন্দি সিল মারা ব্যালট পেপার উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। এর কিছুক্ষণ পর বিলদহর বাজারের স’মিলের পাশে আরও এক বস্তা সিল মারা ব্যালট পেপার দেখে পুলিশে খবর দেওয়া হলে সেগুলো উদ্ধার করে থানায় আনে।

মুন্সীগঞ্জে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থক গুলিবিদ্ধ : মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নির্বাচন পূর্ববর্তী সহিংসতায় মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহ সমর্থকদের হামলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাফিজ্জুজামান খান জিতুর

এক সমর্থক গুলিবিদ্ধসহ দুজন আহত হয়েছেন।

আহতরা হলেন- আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী হাফিজ্জুজামান খান জিতুর ভাতিজা জাবের খান (২২) ও ইমামপুর গ্রামের বাদল খানের ছেলে ইউসুফ খান (৩৩)।

আহতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উপজেলার করিমখাঁ গ্রাম থেকে ইমামপুরে নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহর বাড়ির সামনের রাস্তায় পৌঁছলে তাদের গতিরোধ করে প্রতিপক্ষ। এ সময় প্রথমে তাদের বেধড়ক পিটিয়ে আহত করা হয়। একপর্যায়ে দৌড়ে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করলে জিন্নাহ সর্মথকরা গুলিবর্ষণ করে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হাফিজ্জুজমান খান জিতুর ভাতিজা জাবের খান। আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় দুজনের মধ্যে গুলিবিদ্ধ জাবের খানকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়ে দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. কামরুন নাহার বলেন, জাবের খানের শরীরে গুলিজাতীয় পদার্থের আঘাত রয়েছে। তাকে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। আহত অপরজন আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর