সোমবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

সুদ পরিশোধে ব্যর্থ সন্তান বিক্রির এক বছর পর উদ্ধার

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

সুদের টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়ে এক বছর আগে বিক্রি করে দেওয়া এক নবজাতককে উদ্ধার করে প্রকৃত মায়ের বুকে ফিরিয়ে দিয়েছে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। শনিবার রাতে মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানা এলাকার দক্ষিণ পাশা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় আটক করা হয় শিশুটিকে কিনে নেওয়া রানু বেগম (৪০) নামে এক নারীকে। আটক রানু বেগম মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগরের দক্ষিণ পাশার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর মিয়ার স্ত্রী। এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তরিকুল ইসলাম জানান, অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নেমে নিজস্ব সোর্স ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার দক্ষিণ পাশা গ্রামে অভিযান চালিয়ে বাচ্চাটিকে উদ্ধারসহ আটক করা হয়েছে রানু বেগমকে। এ বিষয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান। তবে মূল হোতা লাকীকে এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি বলে তিনি জানান। তিনি আরও জানান, বাচ্চাটিকে তার প্রকৃত মায়ের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে।

বাচ্চা ক্রয়কারী আটক রানু বেগম পুলিশকে জানান, তার একটি ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। কিন্তু ছেলেটি প্রতিবন্ধী। তাই তিনি একটি ছেলে দত্তক বা ক্রয় করার জন্য পরিচিতজনদের বলে রেখেছিলেন। এক বছর এক মাস আগে শ্যামপুর আফসার করিম রোডের মৃত আয়াত আলীর স্ত্রী সুমা তাকে ফোন করে জানান, একটি বাচ্চা বিক্রি হবে। তিনি তখন ৬০ হাজার টাকা দিয়ে বাচ্চাটি ক্রয় করেন। বাচ্চাটির নাম রাখেন ইউসুফ। সুমা জানান, তার বোন ঝর্ণার মাধ্যমে জানতে পারেন যে একটি বাচ্চা বিক্রি হবে। পরে তিনি তার মামি রানু বেগমকে জানালে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে বাচ্চাটি কিনে নেন।

অন্যদিকে সুমার বোন ঝর্ণা জানান, আলীগঞ্জস্থ বিডব্লিউটিএ কলোনির শাহ আলমের ভাড়াটিয়া ফারুকের স্ত্রী রুবিনা তাকে ফোন করে জানান বাচ্চা বিক্রির কথা। ভাড়াটিয়া রুবিনা জানান, লাকী বেগম তাকে বাচ্চা বিক্রির কথা জানান। পরে ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে বাচ্চাটি কিনে নেন রানু বেগম। লাকী টাকা নেন এবং বাচ্চাটিকে তার মা নিজেই রানু বেগমের হাতে তুলে দেন।

বাচ্চাটির প্রকৃত মা রানী বেগম পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থানার বাদারতলীর হান্নান চৌকিদারের স্ত্রী। তারা সপরিবারে বর্তমানে ফতুল্লা থানার আলীগঞ্জ বিডব্লিউটিএর কলোনিতে বসবাস করেন। তিনি জানান, দুই বছর আগে লাকী বেগমের কাছ থেকে তিনি ৫ হাজার টাকা ঋণ নেন। গত দুই বছরে ওই টাকার বিপরীতে লাকী বেগমকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা সুদ দেন। এমনকি এক বছর আগে সুদের টাকা পরিশোধে তার নবজাতক সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েও সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করেন লাকী বেগম। পরে গত বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) পুনরায় লাকী বেগম বাদী রানী বেগমের বাড়িতে এসে আসল এবং সুদসহ ১ লাখ ৩ হাজার টাকা দাবি করে অন্যথায় তাকে মারধর করা হবে বলে জানান। তবে তিনি এখন বাচ্চাটি ফেরত পেয়ে অনেক খুশি।

সর্বশেষ খবর