ঢাকার তিনটি পাসপোর্ট অফিসের সংকট যেন কাটছেই না। গ্রাহকরা পাসপোর্ট আবেদন করার দীর্ঘদিন পর সিরিয়াল পাচ্ছেন। প্রচন্ড- ভিড় ঠেলে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে আবেদন জমা দিতে হচ্ছে। পাসপোর্ট আনতে গিয়েও দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকার আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের ভোগান্তি নিত্যদিনের। এ ছাড়া ছোটখাটো ভুলের কারণে ভোগান্তি তো রয়েছেই। ঢাকার বাসিন্দা ছাড়াও ৬৪ জেলার বাসিন্দারা এ তিনটি পাসপোর্ট অফিসে ভিড় জমাচ্ছেন।
জেলা পাসপোর্ট অফিসে তেমন ভিড় না থাকলেও ঢাকার পাসপোর্ট অফিসগুলোয় সব সময় লোক গমগম করছে। এত লোকের ভিড় সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন পাসপোর্ট-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ ভোগান্তি বেড়েই চলেছে। অনলাইনে আবেদন করার দেড় থেকে দুই মাস পর পাসপোর্ট জমা দেওয়ার সিরিয়াল পাওয়া যায়। ঢাকায় আরও পাসপোর্ট অফিস হলে এ ভোগান্তি কমবে বলে জানিয়েছেন গ্রাহক ও পাসপোর্ট-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ঢাকায় ২ কোটির বেশি মানুষের বসবাস। এসব নাগরিককে পাসপোর্ট সেবা পেতে নানা ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয়। আবেদন থেকে শুরু করে পাসপোর্ট হাতে পাওয়া পর্যন্ত সময় ক্ষেপণ হচ্ছে বেশ। জরুরি এ সেবা পেতে ভোগান্তির শেষ থাকে না। পাসপোর্টের বর্তমান অফিসগুলোও সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ঢাকায় আরও দুটি পাসপোর্ট অফিসের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে একদিকে ভোগান্তি কমবে, অন্যদিকে সহজে মিলবে সেবা।
পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদফতর (ডিআইপি) সূত্রে জানা গেছে, নগরবাসী ছাড়াও ঢাকায় বসবাসরত ৬৪ জেলার বাসিন্দারা পাসপোর্টের আবেদন জমা দিতে নিজ জেলায় না গিয়ে ঢাকার অফিসে ভিড় জমান। ফলে নানা ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয়। এসব ভোগান্তি দূর করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন দুটি অ্যাপ্লিকেশন প্রসেসিং সেন্টার (এপিসি) বা আবেদন প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র চালুর চেষ্টা চলছে।
এ এপিসিকে ঢাকা পূর্বাঞ্চল হিসেবে মতিঝিল, পল্টন, রামপুরা, কেরানীগঞ্জ, কামরাঙ্গীর চর, খিলগাঁও, চকবাজার, দোহার ও বংশাল এবং ঢাকা পশ্চিমাঞ্চল হিসেবে আদাবর, সাভার, ধামরাই, শাহ আলী, তুরাগ, নিউমার্কেট ও হাজারীবাগ এলাকাকে ধরা হয়েছে। এতে ঢাকায় বসবাসকারী বিভিন্ন জেলার নাগরিকরা এ অফিসগুলো থেকে আবেদন প্রক্রিয়াকরণ করতে পারবেন। পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ অধিদফতরের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠি অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে এখন চলছে এপিসি সেন্টার চালুর প্রক্রিয়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগ ইতোমধ্যে ঢাকা পূর্বাঞ্চল ও ঢাকা পশ্চিমাঞ্চলের অফিস দেখার কাজ শুরু করে দিয়েছে। ঢাকায় কোনো বাড়ি ভাড়া নিতে গেলে আবাসন পরিদফতরের ছাড়পত্র লাগে, যার জন্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওই চিঠির উত্তর এলেই এপিসির কার্যক্রম শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ঢাকার বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘প্রতিদিন ২ হাজার ৫৬০টি পাসপোর্ট জমা নেওয়া হচ্ছে। প্রায় সমানসংখ্যক পাসপোর্ট ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে প্রতিদিন। একটি পাসপোর্ট জমা ও ডেলিভারি দিতে কিছুটা সময় প্রয়োজন। যার কারণে এতগুলো পাসপোর্ট জমা ও ডেলিভারি দেওয়ার সময় ভিড় বাড়ছে। তবে আমরা নাগরিকদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’ আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের এক কর্মকর্তা বলছেন, প্রতিদিন যতসংখ্যক পাসপোর্ট জমা নেওয়া হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি আবেদন জমা পড়ছে। ফলে অনলাইনে আবেদন করার পর পাসপোর্ট জমা দেওয়ার সিরিয়াল পেতে সময় ক্ষেপণ হচ্ছে। ডিআইপির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘গ্রাহকদের সেবা নির্বিঘ্ন করতে নতুন দুটি অ্যাপ্লিকেশন প্রসেসিং সেন্টার (এপিসি) চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢাকায় ৬৪ জেলার মানুষ বসবাস করে। জায়গার সংকুলান না হওয়ায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই এটি চালু হবে।’