রবিবার, ১২ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

ষষ্ঠ জনশুমারিতে যুক্ত তৃতীয় লিঙ্গ

সাইফ ইমন

প্রথমবারের মতো জনশুমারিতে আলাদাভাবে যুক্ত হয়েছে তৃতীয় লিঙ্গ। আগামী ১৫ জুন থেকে ২১ জুন ২০২২ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ষষ্ঠ জনশুমারি। হিজড়া জনগোষ্ঠীর জন্য নিঃসন্দেহে এটি আনন্দের বিষয়। বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে প্রথমবারের মতো নারী ও পুরুষের বাইরে পৃথক লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এর ফলে তারা নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচয়ে পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকাসহ বিভিন্ন সনদ, ফরমে নাম লিখতে পারবে। জনশুমারিতে বাংলাদেশের নারী ও পুরুষের সংখ্যা ও অনুপাত প্রকাশ করা হয়। কিন্তু নারী ও পুরুষের বাইরে যারা আছে তাদের পরিসংখ্যান সঠিকভাবে পাওয়া যেত না। শুমারি থেকে তারা বরাবরই বাদ পড়ে যায়। এখন থেকে জনশুমারিতে হিজড়া জনগোষ্ঠী যুক্ত হওয়ায় এটা হিজড়া জনগোষ্ঠীর জন্য একটি বড় অর্জন। হিজড়াদের সঠিক সংখ্যা জানা গেলে তাদের জীবনমান উন্নয়ন আরও দ্রুততর হবে। তবে জাতীয় উন্নয়নে অংশগ্রহণ এবং সঠিক উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য নির্ভুল শুমারি অত্যাবশ্যক। তাই হিজড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি আহ্বান জাননো হয়েছে জনশুমারিতে সঠিত তথ্য প্রদান করার জন্য। তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করা বন্ধু ওয়েলফেয়ার সোসাইটি তাদের ওয়েবসাইটে এই আহ্বান জানায়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিজা আক্তার বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, একজন শুমারি গণনাকারী হিসেবে বিশ্বব্যাপী এই প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহ গণনা ২০২২ এ অংশগ্রহণ করতে পারায় মনে আলাদা একটা ভালো লাগা অনুভব করছি।

ক্রোমোজম বা হরমনে ত্রুটি অথবা মানসিক কারণে কারও লিঙ্গ পরিচয় নির্ধারণে জটিলতা দেখা দিলে বা দৈহিক লিঙ্গ পরিচয়ের সঙ্গে আচরণগত মিল না থাকলে তাদের চিহ্নিত করা হয় হিজড়া হিসেবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিরা শুধু ‘হিজড়া’ নয়, তাদের মধ্যে ‘রূপান্তরিত নারী’ বা ‘ট্রান্সউইম্যান’, ‘রূপান্তরিত পুরুষ’ বা ‘ট্রান্সম্যান’, ‘ইন্টারসেক্স’, ‘রূপান্তরকামী’, ‘ট্রান্সসেক্স’, ‘সজ্জাকামী’, ‘বৃহন্নলা’-এমন নানা বৈচিত্র্যময় লিঙ্গীয় পরিচয়ের মানুষ আছে। বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতায় এ ধরনের ব্যক্তিদের অবহেলার দৃষ্টিতে দেখা হয় বলে পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র- সব জায়গাতেই তাদের হতে হয় নিগৃহীত, অধিকারবঞ্চিত। এ কারণেই অনেকেই অন্য হিজড়াদের সঙ্গে গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে বসবাস শুরু করেন। হিজড়াদের নিয়ে কাজ করছে এমন সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরেই জনশুমারিতে আলাদাভাবে তাদের যুক্ত হওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছিল। এবার তা পূরণ হতে যাচ্ছে। এতে এই জনগোষ্ঠীর মানুষরা আনন্দ প্রকাশ করেন। বিউটি নামে একজন বলেন, আমাদের নিয়ে সরকার ভাবছে কাজ করছে। এর জন্য আমরা আনন্দিত। সুযোগ সুবিধা পেলে আমরাও দেশ ও জাতীর উন্নয়নে মেধা ও শ্রম দিয়ে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হব।

সর্বশেষ খবর