শিরোনাম
শুক্রবার, ১২ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
পানিতে ডুবেছে ঘরবাড়ি স্কুল কলেজ রাস্তা

জোয়ারে তলিয়েছে নিম্নাঞ্চল

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আগ্রাবাদ থইথই, কক্সবাজার সৈকতে ভাঙন, ভোলা বরগুনা পটুয়াখালীতে দুর্ভোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

জোয়ারে তলিয়েছে নিম্নাঞ্চল

তলিয়ে গেছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও পটুয়াখালীর নিম্নাঞ্চল -বাংলাদেশ প্রতিদিন

জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে দেশের উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় ডুবে গেছে অসংখ্য জনপদ। দুর্ভোগে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। লঘুচাপ ও পূর্ণিমার কারণে জোয়ারের পানির উচ্চতা বেড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। 

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম জানান, কর্ণফুলী নদীর জোয়ারের পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগে পড়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ। এই জোয়ারের পানি নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায়ও উঠেছে। গতকাল দুপুরের দিকে জোয়ারের পানি সড়ক-বাসায় উঠে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন নিচু এলাকার মানুষ।

আগ্রাবাদের ২০, ২১ ও ২৩ নম্বর সড়কে দুপুরের দিকে হঠাৎ জোয়ারের পানি ঢুকে। এতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এই জোয়ারের পানি কমপক্ষে তিন ঘণ্টা থাকে। বেশি নিচু এলাকায় আরও বেশি স্থায়ী থাকে পানি।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জোয়ারের পানির কারণে দোকানের অনেক গুদামে পানি ঢুকে পড়ে। চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও আসাদগঞ্জসহ বিভিন্ন দোকানের ভিতরে পানি ঢোকায় অনেক মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, চাক্তাই খাল ও মহেশখালের জোয়ারের পানির কারণে খাতুনগঞ্জের চাক্তাই, আসাদগঞ্জসহ এলাকায় দোকানপাট, স্থানীয় ঘর বাড়িসহ প্রায় ৫ শতাধিক প্রতিষ্ঠান পানির নিচে ছিল টানা তিন ঘণ্টা। তবে দ্রুত এটার সমাধান না হলে প্রতিদিনই জোয়ারের পানিতে ঘর-বাড়ি এবং দোকানপাট পানির নিচেই থাকতে হবে বলে জানান তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভোগ্যপণ্যের বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই, আসাদগঞ্জ ও বাকলিয়া, সোনালী রোড, আশরাফ আলী রোডসহ কয়েকটি নিচু এলাকায় জোয়ারের পানি উঠেছে। বেলা দেড়টার দিকে পানি উঠে প্রায় তিন ঘণ্টা স্থায়ী ছিল।

কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, উত্তাল সাগরের পানির জোয়ারে সাগর পাড়ে ব্যাপক ভাঙন হচ্ছে। স্রোতের টান আর ঢেউয়ের আঘাতে সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিচ্ছে। তবে অন্য পয়েন্টের তুলনায় ব্যস্ততম লাবণী পয়েন্টে বেশি ভাঙন চলছে। এ পয়েন্টে বেশ কিছু জিও ব্যাগ ছিঁড়ে গেছে। এমনকি ঢেউয়ের ধাক্কায় ওই এলাকার ট্যুরিস্ট পুলিশের হেল্প ডেস্ক ভেঙে গেছে। গতকাল সৈকতের লাবণী পয়েন্ট ছাড়াও কলাতলী পয়েন্ট, কবিতা চত্বর, ডায়াবেটিক পয়েন্টে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে নির্মাণ বাঁধ।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান বলেন, জোয়ারের পানিতে যেসব পয়েন্টে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলোতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে পুনরায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। যেহেতু আগামীকাল পূর্ণিমার জোয়ার উপকূলের আরও কাছে আসতে পারে। তাই ভাঙন রোধে আমরা অতি দ্রুত বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছি।

বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, মোংলা সমুদ্রবন্দরসহ বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবন উপকূলজুড়ে ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি হচ্ছে। সাগর পাড়ের বাগেরহাটে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে। সুন্দরবনে পূর্ণিমায় স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে সুন্দরবনের অনেক এলাকা। সুন্দরবনের উঁচু এলাকা চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল ট্যুরিজম ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র ৩ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে, করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের বন্যপ্রাণী হরিণ, কুমির ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির কচ্ছপ বাটাগুর বাসকা নিরাপদ রয়েছে।  বৈরী আবহাওয়ায় সুন্দরবনের দুবলার চর, মেহেরআলীর চর, ভেদাখালীর অফিস খাল, কটকা, কচিখালী, হিরণ পয়েন্টের আশপাশের নদী-খালে জেলেসহ ৫ শতাধিক ফিশিং ট্রলার আশ্রয় নিয়েছে।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবির জানান, গতকালের তুলনায় বৃহস্পতিবার  জোয়ারের পানি বেড়েছে সুন্দরবনে। তবে, বন্যপ্রাণীগুলো নিরাপদ রয়েছে।

ভোলা প্রতিনিধি জানান, ভোলার মেঘনা তেঁতুলিয়া নদীতে পানির চাপ বেড়েছে। গতকাল মেঘনায় জোয়ারের পানি বিপৎসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে বাঁধের বাইরে অন্তত ২০ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ছে। স্থানীয়রা জানান, গত তিন দিন ধরে সাগরে নিম্নচাপ এবং পূর্ণিমার কারণে মেঘনা নদীতে পানির চাপ অনেক বেড়েছে। বাঁধের বাইরে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো ভরা জোয়ারের সময় ৪ থেকে ৫ হাত পানিতে তলিয়ে যায়। চরাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। এতে ভোলার রাজাপুর, ইলিশা, ধনিয়া, মদনপুর, মেদুয়াসহ অন্তত ২০টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ছে।

বরগুনা প্রতিনিধি জানান, বরগুনার নদ-নদীর জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়িবাঁধের বাহিরে অবস্থিত কাঁচা বসতঘর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অনেক পরিবারে চুলা জ্বলেনি। রাতে জোয়ারে পানি বৃদ্ধির আশঙ্কায় অনেক পরিবারের সদস্যরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। জোয়ারের পানির চাপে পাথরঘাটার কাকচিড়া বাজার রক্ষাবাঁধ, বেতাগী ও আমতলী শহর রক্ষাবাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতোমধ্যে এসব বাঁধের সিমেন্টের ব্লক ধসে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নূরুল ইসলাম বলেন, জোয়ারের পানির চাপে পাথরঘাটার টেংরা বেড়িবাঁধে নতুন করে কিছুটা ভেঙে গেছে।

পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, পূর্ণিমার জোয়ার লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকা পানিতে থইথই করছে। গতকাল সকাল থেকে জেলায় থেমে থেমে বৃষ্টি আর দমকা হাওয়া বইছে। দুপুরের জোয়ারে নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ৩-৪ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে অর্ধশত চরসহ নিম্নাঞ্চল। জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে পটুয়াখালী পৌর শহরে। তলিয়ে গেছে আমনের বীজতলা আর নিম্নাঞ্চলের বহু রাস্তাঘাট ঘর-বাড়ি, পুকুর ও মাছের ঘের। এতে ভোগান্তিতে পড়ে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ।

গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, বঙ্গোপসাগরে লঘু চাপ ও পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকাসহ গলাচিপার অন্তত ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়াও বেড়িবাঁধের অন্তত পাঁচটি পয়েন্ট দিয়ে পানি উপচে পড়ে ফসলের খেত ও বাড়ি-ঘর প্লাবিত হয়েছে। অন্তত ২ হাজার একর ধান খেত ডুবে গেছে।

ভাইয়ার হাওলা গ্রামের কৃষক আলম হাওলাদার বলেন, লঘুচাপ ও পূর্ণিমার জোয়ারে আমাগো এলাকায় আগের চেয়ে পানি বেশি বেড়ে গেছে। এত পানি আগে দেহি নাই। ওয়াবদা উপচে গ্রামে পানি ঢুকে যায়। আমরা এহন কী করমু বুঝতে পারছি না।

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা বন্দরসহ গোটা উপকূলজুড়ে বইছে অস্বাভাবিক জোয়ার। সাগর ও বিভিন্ন নদ-নদীর পানি ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাঙনকবলিত বেড়িবাঁধ থেকে রামনাবাদ নদীর পানি প্রবেশ করে উপজেলার লালুয়া, চম্পাপুর, ধানখালী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দুই দফা  জোয়ারের পানিতে ভাসছে গ্রামীণ জনপদের বাড়ি-ঘর, স্কুল মাদরাসা, পুকুর, ঘেরসহ ফসলি খেত। এসব এলাকার অধিকাংশ পরিবারের দুপুরের রান্নাও হয়নি।

রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতে সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টির প্রভাবে  কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর বেশ উত্তাল রয়েছে। মাছ ধরার অধিকাংশ ট্রলার ঘাটে এসে নোঙর করেছে। গত তিন দিনে পায়রাবন্দর সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে গিয়ে এফবি আনোয়ার, এফবি সুজন ও এফবি নিশাত নামের তিনটি জেলে ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে এখনো ৯ জেলে নিখোঁজ রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর