রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

৩৪ বছর আত্মগোপনে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

নাটোরের গুরুদাসপুর থানায় হামলা করে কনস্টেবল খুন এবং থানা লুট করে চরমপন্থি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় অন্যতম ছিলেন সাইফুল ইসলাম ওরফে মানিক (৫৬)। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এই আসামি ৩৪ বছর ছিলেন আত্মগোপনে। ২০১৮ সালে নাম পরিবর্তন করে বনে যান সাইফুল প্রধান। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকার ভোটার হিসেবে তৈরি করেন জাতীয় পরিচয়পত্র। তবে ছাত্তার নামে শ্রমিক সর্দার হিসেবে তিনি পরিচিত হন। এবার আর শেষরক্ষা হয়নি। অবশেষে শুক্রবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে এলিট ফোর্স র‌্যাব-৩। র‌্যাব বলছে, গ্রেফতার মানিক সর্বহারা দলের সক্রিয় সদস্য। সর্বহারাদের নেতৃত্বে পরিচালিত সব কার্যক্রমে নিয়মিত অংশ নিতেন তিনি। ১৯৮৭ সালে গুরুদাসপুর থানা লুট করে একজন কনস্টেবলকে খুন, অস্ত্র লুট এবং আটক চরমপন্থিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মানিক। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মানিক ১৯৮৪ সালে চরমপন্থি নেতা তারেকের মাধ্যমে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। চরমপন্থি নেতা তারেক প্রতি সপ্তাহে চাটমোহর এলাকায় উঠতি বয়সী যুবকদের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে উঠানবৈঠক করতেন। ঘটনার দুই মাস আগে গুরুদাসপুর থানা লুট করার পরিকল্পনা হয়। এ জন্য তারেক ঝিনাইদহ, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, পাবনা, টাঙ্গাইল এলাকা থেকে চরমপন্থি দলের সদস্যদের আহ্বান জানিয়ে একত্র করেন। ঘটনার দিন তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে ৬০ জন নাটোরের ধামাইর মাঠে এসে জড়ো হয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী ছদ্মবেশে লুঙ্গি-গামছা পরিহিত অবস্থায় পোঁটলার মধ্যে অস্ত্র লুকিয়ে গুরুদাসপুর থানা ও টেলিফোন অফিসের আশপাশ এবং হাট এলাকায় অবস্থান নেন। লে. কর্নেল আরিফ বলেন, ১৯৮৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে কিছু লোক অস্ত্র প্রদর্শন করে টেলিফোন অফিস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেন্ট্রাল কমান্ড বিকল করে দেয়। কয়েকজন থানায় প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে থানা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এ সময় কনস্টেবল হাবিবুর রহমান বাধা দিলে চরমপন্থিরা তাকে গুলি করে হত্যা করে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। এরপর থানার অস্ত্রাগার লুট করে দুটি এসএমজি, চারটি এসএলআর, ১৮টি ৩.৩ রাইফেল ও গোলাবারুদ লুট করে থানার লকআপে বন্দি এক চরমপন্থি আসামিকে ছিনিয়ে নেয়। পরে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য তারা একযোগে টেলিফোন অফিস ও থানা কম্পাউন্ডে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে লুণ্ঠিত মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায়। র‌্যাব বলছে, ওই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে গুরুদাসপুর থানায় ১৯৮৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা হয়। তদন্ত শেষে সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা ২০ আসামিকে গ্রেফতার করেন।দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০০৭ সালে মামলার রায় ঘোষণা করেন আদালত। ১৯৮৯ সালের নভেম্বর মাসে স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে মানিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। জামিনে মুক্ত হয়ে তিনি চরমপন্থি নেতা তারেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

এরপর চরমপন্থি দলের সঙ্গে আবারও হত্যা, লুটপাট, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, অস্ত্র প্রদর্শন করে ত্রাস সৃষ্টি, অস্ত্র নিয়ে এলাকায় মহড়া দেওয়া, অর্থের বিনিময়ে জমি দখল, পারিবারিক বিরোধ মীমাংসার কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েন তিনি। আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, তারেকের সঙ্গে নৌকায় বিলের মধ্যে অবস্থান করতেন গ্রেফতার মানিক।

২০০৪ সালে চরমপন্থিদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের সাঁড়াশি অভিযান শুরু হলে তারেকের নির্দেশে চরমপন্থিরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েন। মানিক রাজধানীতে এসে কিছুদিন বাসের হেলপারি করেন। তিনি ট্রাকে মালামাল লোড-আনলোডের কাজও করেন। এরপর নারায়ণগঞ্জে এক আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নেন। ওই আত্মীয় তাকে একটি গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি দেন এবং সবার কাছে তাকে ছাত্তার নামে পরিচয় করিয়ে দেন। ধীরে ধীরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান স্তিমিত হলে তারা আবার মাঝেমধ্যে এলাকায় গিয়ে সর্বহারা দলের কার্যক্রম চালাতে থাকেন। সাত-আট বছর আগে চরমপন্থি দলের অন্তর্দ্বন্দ্বে তারেক নিহত হলে মানিক সর্বহারা দলের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেন।

সর্বশেষ খবর