বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
প্রতিনিধি পরিষদে নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকানদের

নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়ে বাইডেনকে চ্যালেঞ্জ ট্রাম্পের

প্রতিদিন ডেস্ক

নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়ে বাইডেনকে চ্যালেঞ্জ ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন শেষ না হতেই সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং রিপাবলিকান দলের নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচনে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্র্যাটিক দলের নেতা জো বাইডেনের বিরুদ্ধে লড়বেন বলে জানিয়েছেন। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে ফ্লোরিডার পাম বিচের মার-এ-লাগোর এক অনুষ্ঠানে তিনি এ ঘোষণা দেন। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স।

মার-এ-লাগোতে দেওয়া ভাষণে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে আমার প্রার্থিতা ঘোষণা করছি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তন এখনই শুরু হলো।’ তিনি এরই মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ইলেকশন কমিশনে জমা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি তহবিল সংগ্রহের একটি অ্যাকাউন্টও চালু করেছেন। এদিনের ভাষণে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক মধ্যবর্তী নির্বাচনে নিজ দলের কিছুটা ক্ষতি হওয়ার কথা স্বীকার করেন এবং এর ব্যাখা দিয়ে বলেন, ‘দেশ যে বেদনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, ভোটাররা এখনো সেটি পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারছেন না। তবে ২০২৪ সালের ভোট হবে অনেকটাই আলাদা।’ তিনি এও বলেন, ‘আমার ঘোষণার মধ্য দিয়ে আমেরিকার প্রত্যাবর্তন শুরু হলো। দেশকে আমাদেরই বাঁচাতে হবে।’ প্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের এটি হবে তৃতীয় দফার চেষ্টা। ট্রাম্পের এই ঘোষণা এমন সময় এলো, যখন মধ্যবর্তী নির্বাচনে খারাপ ফলাফলের জন্য তার দল রিপাবলিকান পার্টির কোনো কোনো সদস্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই দায়ী করছেন। মার-আ-লাগোয় আমন্ত্রিত অতিথিদের উদ্দেশ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘জাতি হিসেবে আমাদের অবক্ষয় হচ্ছে। জো বাইডেনের অধীনে গত দুই বছরে লাখ লাখ আমেরিকান কষ্ট, যন্ত্রণা, উদ্বেগ আর হতাশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। আমেরিকাকে আবার মহান এবং সেরা করে তোলার জন্য আজ রাতে আমি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের একজন প্রার্থী হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করছি।’ ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ ঘোষণার ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া আছে কি না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল প্রায় ১১ হাজার মাইল দূরে, ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জি টুয়েন্টি সম্মেলনে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে। উত্তরে জো বাইডেন বলেছেন, ‘না, নেই।’ এদিকে ২০২৪ সালের ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে যাচ্ছে, এত আগে সেই বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণাকে একটি কৌশল হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। যার লক্ষ্য, হোয়াইট হাউসের দৌড়ে রিপাবলিকান পার্টির সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের দূরে সরিয়ে দেওয়া যায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, কয়েকটি কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্পের এবারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা আগের বারের মতো সহজ হবে না। কারণ প্রথমবার যখন তিনি অংশ নেন, তখন তার রাজনৈতিক কোনো রেকর্ড ছিল না। হোয়াইট হাউসে তিনি কেমন দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সেই সম্পর্কে কারও ধারণা ছিল না। কিন্তু এবার তার সেসব  রেকর্ড রয়েছে, যা দিয়ে ভোটাররা তাকে বিচার করতে পারেন। সেই সঙ্গে ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তার ছায়া থেকে তিনি একেবারে মুক্তি পাবেন না। অনেকে ধারণা করেন, এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগ্রহের অন্যতম কারণ, তার বিরুদ্ধে যে একাধিক ফৌজদারি এবং দেওয়ানি মামলা ঝুলছে, সেগুলোর সুরাহা করতে সুবিধা পাওয়া। এর কোনোটি হয়তো বিচারেও গড়াতে পারে। তখন হয়তো তার নির্বাচনী প্রচারণার চেয়ে এসব মামলার তথ্য সংবাদ মাধ্যমে বেশি গুরুত্ব পাবে। তবে রিপাবলিকান দলের মনোনয়নের দৌড়ে তার হয়তো শক্ত একজন প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি হতে হবে। তিনি হচ্ছেন ফ্লোরিডার গভর্নর জেব বুশ। তাকে দলের অন্যতম জনপ্রিয় প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বয়স এখন ৭৬ বছর। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় ব্যাপক পরিশ্রম করতে হয়। এর আগের বার তিনি সেটা করে দেখিয়েছেন, কিন্তু এবার কতটা পারবেন, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।

২০২৪ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এরই মধ্যে বাইডেনের জনপ্রিয়তা এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। ফলে মধ্যবর্তী নির্বাচনের পরও তার পক্ষে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অত্যন্ত কঠিন হবে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিজেদের গণতন্ত্রের সংকটের বিষয়টি একটি বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বারবার গণতন্ত্রের সংকটের কথা মার্কিন জনগণকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। অন্যদিকে বর্ণবাদ, উগ্রবাদ, বৈষম্য, সন্ত্রাসবাদ, গর্ভপাতের স্বাধীনতার মতো বিষয়ও সমান গুরুত্ব পাচ্ছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের নাজুক অর্থনীতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও  বৈদেশিক বিভিন্ন নীতিও অনেকটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সর্বোপরি, এ নির্বাচনের ফলাফল সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ২০২৪-এর নির্বাচনী প্রস্তুতির সুযোগ করে দেবে। নিম্নকক্ষে রিপাবলিকানদের শক্তিশালী অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এমতাবস্থায় বলা যায়, সামনের দিনগুলোয় জো বাইডেন নিঃসন্দেহে চাপমুক্ত থাকবেন না এবং চাপের মধ্যেই তাকে পরবর্তী দুই বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে।

সর্বশেষ খবর