শনিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
দুই সন্তানসহ মায়ের লাশ উদ্ধার

শিশুদের ইঁদুর মারার ওষুধ খাওয়ান মা হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর হাজারীবাগে দুই শিশুকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেন মা। পুলিশ তাদের লাশ উদ্ধার করে। দুই শিশুকে ফিডারে খাবারের সঙ্গে ইঁদুর মারার ওষুধ খাওয়ান মা হাসিনা বেগম। এরপর নিজের ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। বৃহস্পতিবারের ওই ঘটনায় হাসিনার স্বামী সাদ্দামকে আটক করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে বলে জানান তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

স্বামী সাদ্দাম পুলিশকে জানিয়েছে, সন্তানদের ঠান্ডা লাগা নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। এরপর দুপুরের খাবার খেয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যান তিনি। পরে খবরটি শুনতে পান।

গতকাল বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে শিশু সাদিয়ার এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে হাসিনা বেগম ও তার আরেক শিশু সন্তান সিয়ামের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। হাজারীবাগ থানার এসআই নাজমুল হুদা জানান, মৃতের স্বামী সাদ্দাম আটক রয়েছে। মৃতের পরিবার আত্মহত্যার প্ররোচনা এনে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন। লাশ দাফনের পর তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। হাজারীবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) এনামুল হক খন্দকার বলেন, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাদ্দাম ও তার স্ত্রী হাসিনার সঙ্গে ঝগড়া হতো। সংসারের খরচ দেওয়া, তিনটা বাচ্চা থাকা সত্ত্বেও সাদ্দাম রাতে দেরি করে বাসায় ফিরত। রাতেও উবার চালাত। এসব নিয়ে পারিবারিক কলহের কারণে ঘটনাটি ঘটতে পারে। হাসিনা বেগমের ভাই মীর হোসেন বলেন, হাসিনা কী কারণে দুই সন্তানকে হত্যার  পর নিজে আত্মহত্যা করেছেন তা আমরাও ক্লিয়ার না। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই রুমে ইঁদুর মারার ওষুধ দেখতে পান তারা। পাশে বাচ্চাদের খাবার খাওয়ানোর একটি ফিডার পড়ে ছিল। ফিডারের ভিতরে থাকা খাবারের সঙ্গে ইঁদুর মারার ওষুধ মেশানো ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাজারীবাগের গদিঘর এলাকার নুরু হাজীর ২২৭ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলায় থাকতেন হাসিনা। তার স্বামী সাদ্দাম হোসেন প্রাইভেট কার চালক। তিন মাসে আগে এই বাসা ভাড়া নেন তারা। এই দম্পতির তিন শিশু সন্তান রয়েছে। এর মধ্যে সালমানের বয়স আট বছর, সাদিয়ার বয়স তিন বছর, আর সিয়ামের বয়স মাত্র সাত মাস। সংসারে সাদ্দামই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। দুই বন্ধুর সঙ্গে শেয়ারে কেনা প্রাইভেট কার যৌথভাবে উবারে চালাতেন সাদ্দাম। মৃত হাসিনার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের শিবচর থানার চরবাঁচামাড়ায়। তিন শিশু সন্তান ও স্বামী সাদ্দামের সঙ্গে হাজারীবাগের ওই বাসায় থাকতেন। মাত্র তিন মাস আগে ওই বাসায় ওঠেন। দুই রুমের মধ্যে একটি রুম সাবলেট দেন। সেখানে থাকত সাদ্দামের বন্ধুর পরিবার। গতকাল ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায়, হাসিনা বেগম যে রুমে থাকতেন, সেটি বাইরে থেকে দরজা লাগানো। একই ফ্ল্যাটের অন্য রুমে সাবলেট থাকা সাদ্দামের বন্ধুর স্ত্রী রেশমা জানান, ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। তখন তিনি বাসায় ছিলেন না। সাড়ে ৭টার দিকে বাসায় এসে দেখেন, হাসিনার বড় ছেলে সালমান কোচিং থেকে এসে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সালমান দরজায় নক করেই যাচ্ছে। কিন্তু ভিতর থেকে তার মা দরজা খুলছে না। তখন তিনি বিষয়টি পাশের রুমের ভাড়াটিয়া রানা হোসেনসহ কয়েকজনকে জানান। ঘটনাটি রানা হাসিনার স্বামী সাদ্দাম ও বাড়িওয়ালা রমজানকে জানান। ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে সাদ্দাম বাসায় ছুটে আসেন। তখন তারা দরজা ভেঙে দেখেন হাসিনা গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে। খাটের ওপর দুই শিশু সন্তান সাদিয়া ও সিয়াম অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। সাদিয়ার মুখ দিয়ে তখনো ফেনা বের হচ্ছিল। তাই সে জীবিত আছে ভেবে তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান সাদ্দাম। কিন্তু চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর খবর পেয়ে হাজারীবাগ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। ছুটে আসেন হাসিনার মা রূপবানসহ অন্য স্বজনরাও।

সর্বশেষ খবর