বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
চার খুনে ফাঁসির আসামি গ্রেফতার

ছোট ভাইকে হত্যা করতে ৫ কোটি টাকার চুক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বামী-স্ত্রীসহ একই পরিবারের চারজন খুন এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে হত্যাসহ ১১ মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ও ভাড়াটে সন্ত্রাসী পলাশ গাজী ওরফে জালাল গাজী ওরফে দাঁতভাঙা পলাশকে (৪১) গ্রেফতার করেছেন র‌্যাব-৩-এর সদস্যরা। সোমবার রাতে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

র?্যাব জানায়, জমির বিরোধে ছোট ভাই সুলতানকে হত্যা করতে দাঁতভাঙা পলাশের সঙ্গে ৫ কোটি টাকা ও এক বিঘা জমি দেওয়ার চুক্তি করেন মমতাজ। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ জানুয়ারি রাতে পলাশসহ ছয় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী মুখোশ পরে দেশি অস্ত্র দিয়ে সুলতানকে কুপিয়ে হত্যা করে।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ২০১৩ সালে ভাড়াটে সন্ত্রাসী পলাশ গাজী ওরফে দাঁতভাঙা পলাশসহ ছয় সন্ত্রাসী সুলতান, তার স্ত্রী ও দুই নাতিকে কুপিয়ে হত্যা করেন।

কমান্ডার মঈন বলেন, কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী এলাকায় জমির বিরোধ নিয়ে ছোট ভাই সুলতানকে হত্যা করতে দাঁতভাঙা পলাশের সঙ্গে চুক্তি করেন মমতাজ। এরপর পলাশের নেতৃত্বে নজরুল ওরফে মনজু, আমির, জাকির, জালাল, হাসমত ও মমতাজ মিলে ২০১৪ সালে ১৩ জানুয়ারি গভীর রাতে ভূরুঙ্গামারীর দিয়াডাঙ্গায় মমতাজের বাড়িতে বসে সুলতানকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী ১৪ জানুয়ারি রাতে পলাশসহ ছয় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী সুলতানকে কুপিয়ে হত্যা করেন।

সুলতানকে কোপানোর শব্দে তার স্ত্রী হাজেরা বেগম চলে এলে তাকেও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় পাশের ঘরে থাকা দুই নাতনি রুমানা ও আনিকাকেও হত্যা করেন সন্ত্রাসীরা।

এ ঘটনায় নিহত সুলতানের ছেলে হাফিজুর রহমান বাদী হয়ে ভূরুঙ্গামারী থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এর কিছুদিন পর ভূরুঙ্গামারীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অন্য একটি হত্যা মামলা তদন্ত করতে গিয়ে সপরিবারে সুলতান হত্যার রহস্য উন্মোচন করে। এ ঘটনায় অন্য আসামিদের গ্রেফতার করা হলেও আত্মগোপনে থেকে যান দাঁতভাঙা পলাশ।

এ ঘটনায় তদন্ত শেষে মমতাজ উদ্দিন, পলাশ গাজী ওরফে জালাল গাজীসহ সাতজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। বিচারিক আদালত ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পলাতক আসামি দাঁতভাঙা পলাশসহ ছয়জনকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন এবং অন্য একজনকে খালাস দেন।

এ ছাড়া ২০১৫ সালের জুলাইয়ে বগুড়ার শেরপুরের মির্জাপুরে মাইক্রোবাস চুরির উদ্দেশ্যে এর চালক নুরুল হককে হত্যা করেন পলাশ গাজী ও তার সহযোগীরা। ওই হত্যার ঘটনায় এ বছরের নভেম্বরে আদালত পলাশ গাজীসহ নয় আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডাদেশ দেন।

র?্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, গ্রেফতার পলাশের কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। তিনি ১৯৯০ সাল থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে একটি গ্যারেজে কাজ করতেন। ১৯৯৫ সালে লাইসেন্স ছাড়া কাভার্ডভ্যান চালানো শুরু করেন। পলাশ মূলত ২০০৯ সালে অপরাধ কর্মকান্ড শুরু করেন। সে সময় তিনি একটি ডাকাত দল গঠন করেন।

একটি পুরনো মাইক্রোবাস নিয়ে ভুয়া ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি এবং বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর তার নেতৃত্বে একটি ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীর দল গড়ে ওঠে। তারা রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলার মহাসড়কে ডাকাতি, খুন, মারামারিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম চালাতেন।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, গ্রেফতার পলাশ গাজীর বিরুদ্ধে সপরিবারে সুলতান হত্যাকান্ড ছাড়াও পটুয়াখালীর বাউফলে ২০১৫ সালে হত্যাচেষ্টা, গাজীপুরের কালীগঞ্জ সড়কে ২০১৫ সালে ডাকাতির প্রস্তুতি, মতিঝিলের সড়কে ২০১৬ সালে ভুয়া ডিবি পরিচয়ে একটি ডাকাতি ও একটি অস্ত্র, ২০১৭ সালে চুরি ও ভাঙচুরের দুটি এবং চকবাজার থানায় ২০১৯ সালে বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে একটি হত্যাসহ মোট ১১টি মামলা রয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর