রবিবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

সাজাপ্রাপ্ত ২৬৫ জনকে ভালো হওয়ার সুযোগ

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশালে মাদক সেবনসহ লঘু অপরাধে প্রথমবার সাজাপ্রাপ্ত ২৬৫ জনকে মা-বাবার সেবা ও সামাজিক কর্মকান্ড করার শর্তে প্রবেশনে মুক্তি দিয়েছেন আদালত। আদালতের শর্ত প্রতিপালন করে ইতোমধ্যে ৭০ জন পুরোপুরি মুক্ত হয়েছে। প্রবেশন পাওয়ায় সামাজিক মর্যাদা অক্ষুণœ থাকার পাশাপাশি নিজের ভুল শুধরে নতুন করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে লঘু অপরাধীরা। এতে খুশি তাদের পরিবার ও প্রতিবেশীরা। প্রবেশন পাওয়া অন্যদেরও সংশোধন করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন সমাজসেবা কর্মকর্তারা। লঘু অপরাধীদের প্রবেশন দেওয়া আদালতের যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে জানিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ লুৎফর রহমান সরকারের বাসিন্দা মহিউদ্দিন ডাকুয়া একটি বেসরকারি কোম্পানির ডেলিভারি ভ্যান চালিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। প্রায় এক বছর আগে এক পুরিয়া গাঁজা পাওয়ার মামলায় তাকে ছয় মাসের কারাদন্ডের আদেশ দেন আদালত। পরিবারে মহিউদ্দিন ছাড়া উপার্জনক্ষম কেউ নেই। মহিউদ্দিন প্রথমবারের মতো লঘু অপরাধ করায় তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২১ দিন দন্ড ভোগ করার পর আদালত তাকে বাবা-মায়ের সেবা, নিয়মিত নামাজ আদায় এবং কৃষিকাজ করার শর্তে প্রবেশন অ্যাক্ট, ১৯৬৪-এর ৫ ধারা অনুসারে সমাজসেবা কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে প্রবেশনে মুক্তি দেন। আদালতের আদেশ প্রতিপালন করে এখন পুরোপুরি মুক্তির দ্বারপ্রান্তে মহিউদ্দিন। দন্ড হওয়ার পরও কারাগারে না গিয়ে বাসায় থেকে সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে জড়িত হওয়ায় এলাকায় ভাবমূর্তি অক্ষুণœ তার। জীবিকা উপার্জন করে পরিবার-পরিজনের মুখে অন্ন সংস্থান করছেন তিনি। সংশোধন হওয়ার সুযোগ দেওয়ায় আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মহিউদ্দিন। তার মতো বাকেরগঞ্জের যুবক মো. মিরাজেরও এক পুরিয়া গাঁজা পাওয়ার মামলায় ছয় মাসের কারাদন্ড হয়। প্রথমবারের মতো অপরাধ করায় দোষ স্বীকার করে দায় থেকে মুক্ত হলে প্রবাসে থাকা স্ত্রীর কাছে চলে যাওয়ার অঙ্গীকার করে আদালতে আবেদন করেন মিরাজ। সপ্তাহে চার দিন মসজিদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা, বাবা-মায়ের সেবা করা, ভালো কাজ করা এবং মাদকের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানোর শর্তে ১২ দিন কারাভোগের পর প্রবেশনে মুক্তি পান তিনি। মহিউদ্দিন ও মিরাজের মতো নানা লঘু অপরাধে দন্ডপ্রাপ্ত ২৬৫ জনকে এভাবে প্রবেশনে মুক্তি দিয়েছেন বরিশালের আদালত। আদালতের সুযোগ লুফে নিয়ে অতীতের ভুল শুধরে জীবনের গতি পাল্টে ফেলেছেন তাদের অনেকে। প্রবেশন পাওয়া ব্যক্তিদের সার্বিক কার্যক্রম নজরদারির জন্য জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। প্রথমবার লঘু অপরাধীদের প্রবেশনের মাধ্যমে মুক্ত জীবনে সংশোধন হওয়ার সুযোগ দেওয়া আদালতের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে মনে করেন বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাবেক আইন কর্মকর্তা (পিপি) ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, লঘু অপরাধীরা একই কারাগারে দাগি আসামিদের সঙ্গে থাকলে তাদেরও ভয়ংকর অপরাধী হয়ে ওঠার আশঙ্কা থাকে। কারাগারে থাকা অন্য লঘু অপরাধীদের সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হলে তারাও আলোর পথে ফিরে আসবে বলে প্রত্যাশা তার।

সর্বশেষ খবর