শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

গোয়েন্দা কর্মকর্তার পরিচয়ে তল্লাশির নামে ডাকাতি, লুট

নিজস্ব প্রতিবেদক

গোয়েন্দা কর্মকর্তার পরিচয়ে তল্লাশির নামে ডাকাতি ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করেছেন ডলার এবং তার সহযোগীরা। দীর্ঘদিন সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করার সুবাদে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কে ভালোভাবে রপ্ত করেন আবদুল কুদ্দুস ওরফে ডলার নাহিদ (৩০)। সেই ধারণা থেকে নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। এরপর ওই গ্রুপের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির এলাকায় ঘুরতে গিয়ে বলতেন বিশেষ অভিযানে সেখানে গেছেন।

এমনকি স্থানীয় থানা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও ভুয়া পরিচয় দিয়ে দ্বিধায় ফেলতেন, বিশেষ অভিযানের নামে তাদের সহায়তা চাইতেন। টার্গেট এলাকায় দু-একদিন ঘুরে বাড়িঘর রেকি করতেন। এরপর একরাতে সেসব বাড়িতে অভিযানের নামে তল্লাশি চালিয়ে সর্বস্ব লুট করে নিতেন। সুনামগঞ্জ সদরের নারায়ণতলা গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে অভিযানের নামে লুট ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় বুধবার রাতে রাজধানীর মিরপুর থেকে নাহিদকে আটক করেছে র‌্যাব-৪। তার কাছ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভুয়া পরিচয়পত্র ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন বাহিনীর পোশাক পরা ছবি জব্দ করা হয়। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, গত ২৫ জানুয়ারি রাতে সুনামগঞ্জের নারায়ণতলা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক চেয়ারম্যান মোকসেদ আলীর বাড়িসহ কয়েকটি বাড়িতে তল্লাশির নামে লুটপাট এবং শ্লীলতাহানি করেন নাহিদ ও তার সঙ্গীরা।

ঘটনা বুঝতে পেরে এ সময় এলাকাবাসী তাদের আটক করে পুলিশে খবর দেয়। কিন্তু কৌশলে চক্রের হোতা নাহিদ ও স্থানীয় বাসিন্দা বিজন রায় পালিয়ে যান। এভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভুয়া পরিচয়ে অভিযানের নামে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী লুট করতেন তারা। এ ঘটনায় গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা হয়। এরপর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিজন রায়কে মিরপুর থেকে আটক করে র‌্যাব-৪। বিজনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নাহিদকে আটক করা হয়। খন্দকার আল মঈন বলেন, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন নাহিদ। ২০০৯ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা থাকলেও নিজেকে ১৯৯৬ সালের এসএসসি ব্যাচ দাবি করতেন নাহিদ। ২০১৬ সালে ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি নেন। সেই সুবাদে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিভিন্ন বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের কাছ থেকে বাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে পারেন। এসব ভালোভাবে রপ্ত করে গত ৫ থেকে ৬ বছর ধরে নিজেকে গোয়েন্দা কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন। গত চার-পাঁচ মাস আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি গ্রুপে নাহিদের সঙ্গে বিজনের পরিচয় হয়। রাজধানীতে বিজনের সঙ্গে দেখা করার পাশাপাশি তার বাড়ি সুনামগঞ্জ হওয়ায় নাহিদ সেখানে যান। বিজন সুনামগঞ্জের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল। পরে বিজনের সঙ্গে সুনামগঞ্জে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের কাছে কৌশলে নিজেকে গোয়েন্দা কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সেখানে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানের কথা জানান এবং তাদের সহায়তা চান। এরপর বিজন ও অন্য সহযোগীদের নিয়ে বিভিন্ন বাড়িতে লুটের পরিকল্পনা করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর