শনিবার, ৪ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
জাতিসংঘের প্রতিবেদন

রোহিঙ্গাদের ফেরার পরিস্থিতি নেই মিয়ানমারে

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বাংলাদেশে আশ্রিত ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ফেরার মতো অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। মধ্য ও উত্তর রাখাইনে অবস্থানরত প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা বড় ধরনের ঝুঁকিতে আছে। গতকাল জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রতিবেদনে এ কথা বলেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দফতরের প্রধান ভোলকার তুর্ক । বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের আরও অধিকারের ওপর তিনি জোর দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ, মিয়ানমারের বাইরে অন্য কোনো দেশে প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিতে সুপারিশ করেছেন। মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভোলকার তুর্ক বলেন, অভ্যুত্থানবিরোধীদের হত্যা, নির্বিচারে গ্রেফতার, নির্যাতন, গুমসহ অব্যাহত সহিংসতার মাধ্যমে মানবাধিকার সংকটকে স্থায়ী রূপ দিচ্ছে মিয়ানমার বাহিনী। অভ্যুত্থানের দুই বছর পরও মিয়ানমারের জেনারেলরা বিরোধীদের স্তব্ধ করে দেওয়ার নীতি অনুসরণ করছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিরোধীদের বিরুদ্ধে স্থল অভিযানে বাধার মুখে পড়ে সামরিক বাহিনী আকাশপথে হামলার কৌশল নিয়েছে। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান ও হামলা চালাতে গিয়ে অন্তত তিনবার মিয়ানমার সামরিক বাহিনী প্রতিবেশী দেশগুলোর আকাশসীমায় ঢুকে পড়ে। ভোলকার তুর্ক বলেন, দুঃখজনকভাবে শান্তি ও সংযমের জন্য আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রচেষ্টাগুলো কাজে আসছে না। মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ক্রমাগত এবং নিরঙ্কুশ দায়মুক্তির মাধ্যমে উৎসাহিত হয়েছে এবং ক্রমাগত আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা নীতিগুলোর প্রতি অবজ্ঞা দেখিয়েছে।

এ ভয়াবহ বিপর্যয়ের অবসান ঘটাতে জরুরি ও দৃঢ় উদ্যোগ প্রয়োজন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের প্রতিবেদনে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ, নির্বিচারে আটক সবার মুক্তি, জবাবদিহি ও মানবিক তৎপরতার সুযোগ দেওয়ার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও আসিয়ানের আহ্বানের প্রতিধ্বনি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব অংশে সহিংসতার মাত্রা তীব্র হওয়ার তথ্যও প্রতিবেদনে রয়েছে। বিশ্বাসযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভ্যুত্থানের পর থেকে অন্তত ২ হাজার ৯৪০ জন নিহত হয়েছেন। গ্রেফতার হয়েছেন অন্তত ১৭ হাজার ৫৭২ জন। দেশের ৩৩০টি টাউনশিপের প্রায় ৮০ শতাংশই সশস্ত্র সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় সামরিক বাহিনী চারটি কৌশল ব্যবহার করছে। এগুলোর মধ্যে আছে নির্বিচারে বিমান হামলা এবং

আর্টিলারি শেলিংয়ের মাধ্যমে বেসামরিক জনগণকে বাস্তুচ্যুত করতে গ্রামগুলোকে ধ্বংস করা, মানবিক সহায়তা কর্মীদের প্রবেশাধিকার নাকচ করা, সংগঠিত বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর খাদ্য, অর্থসহ অন্যান্য সরবরাহব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দফতরের প্রধানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনীতিতে সামরিক বাহিনীর অব্যবস্থাপনা জনসংখ্যার বেশির ভাগের জন্য অর্থনৈতিক সংকটকে উসকে দিয়েছে। ফলে ২০২০ সালের মার্চের তুলনায় বর্তমানে দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ হয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর