ধীরে ধীরে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। এক দিনের ব্যবধানে গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে। গত পরশু দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টানা ১৫ দিন দেশের সবচেয়ে উত্তপ্ত জেলার খেতাব পাওয়া চুয়াডাঙ্গায় গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪০.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা একদিন আগেও ছিল ৪২.৬ ডিগ্রি। ঢাকায় গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা আগের দিন ছিল ৩৮.১ ডিগ্রি। পরশু রাত থেকে সিলেটের কিছু স্থানে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। আজ দেশের চার বিভাগে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
বৃষ্টি প্রার্থনায় জেলায় জেলায় নামাজ : তীব্র গরম ও দাবদাহ থেকে বাঁচতে সৃষ্টিকর্তার কৃপা কামনা করে বৃষ্টি চেয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ নামাজ (সালাতুল ইস্তেসকার) ও মোনাজাত হয়েছে। গতকাল বৃষ্টির জন্য কুমিল্লা নগরীর রেসকোর্স এলাকার একটি মাঠে আয়োজিত নামাজে কয়েক শ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন।
আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে কান্নায় ভেঙে পড়েন মুসল্লিরা। সৃষ্টিকর্তার কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করে নামাজ আদায় করেছেন ঝিনাইদহের মুসল্লিরা। গতকাল সকালে শহরের ওয়াজির আলী স্কুল মাঠ প্রাঙ্গণে জেলা ইমাম পরিষদের আয়োজনে সালাতুল ইস্তেসকার নামাজ আদায় করা হয়।দীর্ঘ দিন ধরে তাপমাত্রায় শীর্ষে থাকা চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টি প্রার্থনা করে বিশেষ নামাজ আদায় করেছেন বাসিন্দারা।
শহরের টাউন ফুটবল মাঠে গতকাল এ নামাজের আয়োজন করা হয়। এদিকে গত ১৭ এপ্রিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠেছিল পাবনার ঈশ্বরদীতে। তীব্র দাবদাহে পুড়ছে পুরো জেলা।
তীব্র গরম ও দাবদাহ থেকে রক্ষা পেতে বৃষ্টি চেয়ে বিশেষ নামাজ ও মোনাজাত করেছেন পাবনাবাসী। পাবনার যুব সমাজের আয়োজনে গতকাল বেলা ১১টায় পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে এই নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় এলাকাবাসীর আয়োজনে উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের আলীপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ মাঠে বৃষ্টি কামনায় গতকাল বিশেষ নামাজ আদায় করেন শতাধিক মুসল্লি। মানিকগঞ্জ জেলা ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ পরিষদের ব্যবস্থাপনায় গতকাল সকাল ১০টায় শহীদ মিরাজ-তপন স্টেডিয়ামে সালাতুল ইস্তেসকার আদায় করেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
উদ্বিঘ্ন কৃষক : তীব্র গরম ও দাপদাহে পুড়ছে দেশ। সেই সঙ্গে পুড়ছে ফসল। ঝরে পড়ছে আম ও লিচুর গুটি। ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিস জানায়, গত সোমবার ঈশ্বরদীতে চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি সলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ডের পর মঙ্গলবারও ছাড়িয়েছে ৪০ এর ঘর। প্রচন্ড তাপ প্রবাহ ও চৈত্রের খরায় প্রতিদিন গাছ থেকে ঝরে পড়ছে অপরিপক্ব লিচু ও আমের গুটি। দুশ্চিন্তায় পড়েছেন লিচু চাষিরা। চলতি মৌসুমে বোরো ধানের জমিতে পানি দিতেও হিমসিম খেতে হচ্ছে কৃষকদের। এরই মধ্যে ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। কোনো কোনো এলাকায় ১৪-১৫ ঘণ্টা লোডশেডিংয়েরও খবর পাওয়া গেছে। একই ধরনের খবর পাওয়া গেছে চাঁপাইনবাগঞ্জ, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরাসহ দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে। ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, তীব্র খরা চলছে। লিচু ও আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে। কৃষকদের সাব-মার্সিবলের মাধ্যমে রাতের বেলায় জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। বোরো ধানের জমিতে সব সময় দুই থেকে তিন ইঞ্চি পানি রাখতে হবে। পাশাপাশি বোরো ধানের জমিতে বিঘা প্রতি পাঁচ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে।