শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

পানির স্তর নামছে, দুর্ভোগ বাড়ছে রাজশাহীতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

পানির স্তর নামছে, দুর্ভোগ বাড়ছে রাজশাহীতে

রাজশাহীতে পানির সংকট দিন দিন বাড়ছে। এ অঞ্চলের ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট জটিল আকার ধারণ করছে। এতে এ অঞ্চলের মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহার্য পানিসহ সেচের পানি নিয়ে দুর্ভোগের মাত্রা আরও বাড়ছে।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। বিশুদ্ধ খাবার পানি নিয়ে মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। উপজেলার পাকুরিয়ার মেরাজুল ইসলাম বলেন, দুই সপ্তাহ আগে বাড়িতে বসানো টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। পাশের বাড়ি থেকে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। উত্তর মিলিক বাঘা গ্রামের নাসির উদ্দীন বলেন, বাড়ির টিউবওয়েলে ১৭০ ফুট পাইপ বসিয়েছেন। এরপরও পানি উঠছে না। বিদ্যুৎচালিত মোটর বসানো আছে, সেখানেও পানি উঠছে না।

রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌরসভার মাহালিপাড়া গ্রামে পৌরসভা ও স্থানীয় প্রশাসন ৭০০ ফুট পর্যন্ত বোরিং করেও পানির স্তর পায়নি। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন তারাও। এলাকার অধিকাংশ নলকূপে পানি উঠছে না। উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশীদ ময়না জানান, আগে থেকেই শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকট দেখা দেয়। এবার সে সংকট তীব্র হয়েছে।

চারঘাট উপজেলায়ও পানির সংকট দেখা দিয়েছে। পৌরসভার সরবরাহ করা পানি দিয়ে প্রয়োজন মিটছে না নাগরিকদের। বাধ্য হয়ে অনেকে বাড়িতে সাব-মার্সিবল পাম্প বসাচ্ছেন তারা। চারঘাট পৌরসভার মেয়র একরামুল হক জানান, এবার প্রচণ্ড গরম। আগে থেকেই পদ্মা নদী শুকিয়ে যাওয়ায় এলাকার নলকূপগুলো থেকে পানি উঠছে না। তারা চেষ্টা করছেন, পানি সরবরাহ বাড়াতে। চারঘাট উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তথ্য বলছে, উপজেলায় গভীর ও অগভীর নলকূপ আছে প্রায় ১৭ হাজার ৫০০টি। জনস্বাস্থ্য অধিদফতর গত তিন বছরে ইউনিয়ন পর্যায়ে গভীর নলকূপ স্থাপন করেছে ৪৬২টি। এসব নলকূপের জন্য দুটি লেয়ার আছে। প্রথম লেয়ারে পানি উত্তোলনের ক্ষমতা আছে ৮০০ থেকে ৯০০ ফুটের মধ্যে এবং দ্বিতীয় লেয়ারে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ ফুটের মধ্যে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মাছ উৎপাদনসহ নানা কাজে খেয়াল-খুশিমতো গভীর নলকূপ স্থাপন করায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে গেছে। ফলে এখন পানি উঠছে না। একই অবস্থা রাজশাহীর মোহনপুরেও। সেচ ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। মোহনপুর উপজেলা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) সহকারী প্রকৌশলী গোলাম ফারুক বলেন, চলতি মৌসুমে খরা অনেক বেশি। এ জন্য বোরো খেতে ঘন ঘন সেচ দিতে বেগ পেতে হচ্ছে গভীর নলকূপ অপারেটরদের। তবে কয়েকটি গভীর নলকূপের সমস্যা দেখা দেওয়ার পর কারিগরি প্রযুক্তির মাধ্যমে সারানো হয়েছে। পানির স্থিতিশীল স্তর দেবে যাওয়ায় সেচ যন্ত্রসহ বসতবাড়িতে পানির কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলায় তাদের বিদ্যুৎচালিত ৭২৫টি গভীর নলকূপ আছে। একদিকে খরা, অন্যদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ দিতে সমস্যা হচ্ছে। এতে ধানের ক্ষতি হচ্ছে। গোদাগাড়ী উপজেলার মোহরাপুর মৌজায় বিএমডিএর তিনটি গভীর নলকূপ আছে। এর মধ্যে মোহরাপুর-১ গভীর নলকূপের আওতার ধান খেতের অবস্থা বেশি খারাপ। পানির অভাবে খেতের জমির মাটি সাদা হয়ে গেছে। কোনো কোনো জমির মাটি ফেটে চৌচির হয়েছে। পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের ভূ-গর্ভস্থ পানি সম্পদের প্রাপ্যতা যাচাই কমিটির সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, প্রতি বছর বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর এক ফুট করে নিচে নেমে যায়। পরের বছর তা আর ওঠে না। প্রতি বছরই বরেন্দ্র এলাকার পানির স্তর নিচে নামছে। এটি খুবই উদ্বেগের বিষয়। জলবায়ু পরিবর্তন এর অন্যতম কারণ। আবার বৃষ্টি কম হওয়ায় ভূ-গর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহারও দায়ী। এ থেকে উত্তরণের পথ হতে পারে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়ানো। এতে স্থিতিশীল একটা অবস্থা আসতে পারে। কিন্তু যে স্তর নেমে গেছে, তা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে গবেষণা করে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই কর্মসূচি দ্রুতই হাতে নেওয়া দরকার।

সর্বশেষ খবর