রেয়াতসহ নানা শুল্ক ছাড়ের সুবিধা নিচ্ছেন পোলট্রিশিল্প মালিকরা। কিন্তু এসব সুবিধার প্রতিফলন নেই বাজারে। ডিমের বাজারে অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে পোলট্রি, ডেইরি ও ফিশ ফিডের উৎপাদনমূল্য পর্যালোচনার জন্য তাগিদ দিয়েছেন অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের বাজার পর্যালোচনায় গঠিত জাতীয় কমিটির সদস্যরা। তাঁরা বলছেন, ডিমের চাহিদার তুলনায় উৎপাদনে ঘাটতি না থাকলেও অদৃশ্য কারণে বাজারে অস্বাবিকভাবে এর দাম বেড়েছে। খামারিরা বাড়তি দাম না পেলেও সুবিধা নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। গতকাল বাণিজ্য সচিব তপনকান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআই, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, সরকারের বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি এবং সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্র জানান, দেশের পোলট্রি ফার্মগুলোকে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭৭০ কোটি টাকা শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে হয়েছে ৯৭৮ কোটি টাকা। বৈঠকসূত্র জানান, বর্ষার জন্য পিঁয়াজের বাজারে দাম কিছুটা বেড়েছে। এজন্য অক্টোবর পর্যন্ত আমদানির মাধ্যমে পিঁয়াজের মজুদ বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সমন্বিত নীতিমালা, পণ্যের চাহিদা-মজুদ সরবরাহ লাইনের প্রকৃত তথ্যের ঘাটতির ফলে ডিম, তেল, চিনি, লবণ, আটা, পিঁয়াজসহ অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ভোক্তার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের বাজার পরিস্থিতি ও সরবরাহে নজরদারি বাড়ালে বাজারে যৌক্তিক দামে এসব পণ্য পাবে ভোক্তা। ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। তবে সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো দিয়ে শুধু নজরদারি করলেই হবে না, নীতিসহায়তাও দিতে হবে। ব্যবসায়ীদের আস্থায় নিতে হবে। সরকারের ভুল নীতির কারণে যেন শিল্পের সংকট না হয় সে বিষয়েও সচেতন থাকতে হবে।
বৈঠকে উপস্থিত এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধি ও সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, উৎপাদন পর্যায়ে তদারকির অভাব, অরক্ষিত সরবরাহব্যবস্থা, পোলট্রি খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, ডলার সংকট এবং ঋণপত্র (এলসি) খোলায় জটিলতার ফলে ডিমের বাজারে প্রভাব পড়েছে। তবে এখন সরকারের তদারকি সংস্থার বাজার অভিযানের ফলে দাম কমতে শুরু করেছে। এদিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের তথ্য বলছে, ডিম বাজারজাতকরণে অতিমুনাফা ও ত্রুটিপূর্ণ মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতির ফলে ডিমের বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়। পাশের দেশ ভারতে ডিমের মূল্য প্রতি ডজনে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, যা বাংলাদেশের তুলনায় অর্ধেক। দেশে ডেইরি ও পোলট্রি ফিডের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হলেও বাজারে এর সুফল মিলছে না।