কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে সব ধরনের নিত্যপণ্য, কাপড়, সোনা, পাইকারি-খুচরা মুদি দোকান, জুতার দোকানসহ প্রায় সব কিছুই ছিল সেখানে। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নানা ধরনের ক্রেতায় মুখর থাকত রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জনপ্রিয় কৃষি মার্কেটটি। মাত্র এক দিনের ব্যবধানেই পুরো মার্কেট এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। দোকানগুলো দাঁড়িয়ে থাকলেও ভেতরে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে প্রায় সবই। দিন-রাত জমজমাট থাকা মার্কেটজুড়ে এখন শুধুই পোড়া গন্ধ।
গতকাল সকালে কৃষি মার্কেটের বেশির ভাগ ব্যবসায়ীকেই যার যার দোকানের সামনে নির্বাক হয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। তাদের দুই চোখে ছিল যেন অনিশ্চয়তার ছাপ। এদের কেউ কেউ ভেতরের পোড়া স্তূপ সরিয়ে নিচ্ছিলেন। কয়েকজন জানালেন, আগুনে তাদের দোকানই নয়, পুড়েছে তাদের একেকটি পরিবারের স্বপ্ন। বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে কী করবেন কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না তারা। আবার ঘুরে দাঁড়াতে চান, সহায়তা চেয়েছেন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। যত দ্রুত সম্ভব পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন তারা। পুড়ে যাওয়া শুভেচ্ছা জুয়েলার্সের মালিক বিল্লাল হোসেন বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে যৌথ মালিকানায় চলছে শুভেচ্ছা জুয়েলার্সের ব্যবসা। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে পশ্চিম-উত্তর পাশ থেকে আট মাস আগে স্থানান্তর করা হয় উত্তর-পূর্ব পাশের বর্ধিত অংশে। চোখের সামনে কোটি টাকার সম্পদ পুড়তে দেখলাম, কিছুই করতে পারলাম না। কোটি টাকার সম্পদের পাশাপাশি দুটি কসমেটিকসের দোকান পুড়ে গেছে দুই ভাই জহিরুল ইসলাম লিটন ও জসিম উদ্দিনের। আগুন লাগার পরে দৌঁড়ে এসেও কিছুই উদ্ধার করতে পারেননি। সব শেষ হয়ে গেলেও পোড়া দোকান ছেড়ে যাননি তারা কেউই। জসিম বলেন, একটা কিচ্ছু বের করতে পারি নাই, একটা সুতাও না। এখন কি করব, কোথায় কার কাছে যাব! কবে দোকান ঠিক হবে, আর ঠিক হলেই আবার দোকান সাজাতে মালামাল তোলার টাকা কই পাব। জানি না সামনের দিনগুলোতে কী হবে। এদিকে গতকালও কৃষি মার্কেটের সামনে জেলা প্রশাসনের পক্ষে একটি বুথ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরাও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে তালিকায় নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করছিলেন।
ঢাকা জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের একটি তালিকা করব। তারপর আমরা সরকারের পক্ষ থেকে তাদের মানবিক সহায়তা করার চেষ্টা করব।বৃহস্পতিবার ভোর পৌনে ৪টায় মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে অগ্নিকান্ডের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। খবর পেয়ে প্রথমে সাতটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। পরে ধাপে ধাপে ইউনিট বেড়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট। প্রায় ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় ৯টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এরপরও বিভিন্ন জায়গায় আগুন জ্বলছিল। পরে প্রতিটি দোকান এবং জায়গা তল্লাশি করে গতকাল সকাল সাড়ে ৭টায় পুরোদমে আগুন নির্বাপণের ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিস।
গতকাল জুমার নামাজের পর আবদুর রহিম নামে এক ব্যক্তির মাথায় কয়লা ও ছাইয়ের বস্তা তুলে দিচ্ছিলেন আরও দুজন। সেই বস্তা নিয়ে বের হচ্ছিলেন তিনি। এভাবে একে একে বের করা বস্তাগুলো রাস্তায় রাখা ভ্যানে সাজানো হয়।
পোড়া মার্কেটের ভেতরে নন্দন জুয়েলার্স নামের একটি সোনার দোকান থেকে কয়লা ও ছাইয়ের বস্তাগুলো বের করা হচ্ছিল। এগুলো জুয়েলার্সের মালিক নূরে আলমের বাসায় নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। নন্দন জুয়েলার্সের মালিক নূরে আলম জানান, মার্কেটে আগুন লাগার পরও কিছু সোনা উদ্ধার করা গেছে। বাকি অনেক সোনা পাওয়া যায়নি। শেষ আশা এখন পুড়ে যাওয়া ছাই ও কয়লার ভেতর। এগুলো বাসায় নিয়ে কয়লা উলটপালট করে দেখা হবে সোনা আছে কি না।