স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, বিদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তায় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবসময় সজাগ থাকবে। যাতে কেউ কোনো রকম নাশকতা কিংবা ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রীর নিজ দফতরে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস-এর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান মন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের মধ্যে খুবই সৌহার্দপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। জাতিসংঘসহ অন্যান্য বিদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তার জন্য আমরা কী পদক্ষেপ নিয়েছি সেটি জানতে চান আবাসিক সমন্বয়ক। আমরা বলেছি, জনগণের নিরাপত্তা দেওয়াই আমাদের কাজ। পাশাপাশি বিদেশি যারা আছেন, তাদের অগ্রাধিকার দিয়েই ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা আরও বলেছি, যদি মনে করেন, আপনার নিরাপত্তা আরও বাড়াতে হবে, তাহলে আপনি আমাদের জানালেই সেই বিষয়টি বিবেচনা করব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উনাদের একটি লম্বা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, প্রথমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তারপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। আমরা তাদের একটি সহজ পদ্ধতি বলে দিয়েছি যে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে একটি অনুলিপি দিলেই আমরা পদক্ষেপে যাব।
মন্ত্রী বলেন, আমরা তাকে বলেছি, বাংলাদেশে নির্বাচন একটি আনন্দঘন পরিবেশে হয়, সবাই উৎসুক হয়ে অপেক্ষা করছেন, যখন থেকে প্রচার-প্রচারণা শুরু হবে, তখন থেকে ঢাকঢোল পিটিয়ে মিছিল দেখতে পাবেন। এটা কেবল বাংলাদেশই না পুরো উপমহাদেশেই এমনটি ঘটে আসছে। বিদেশি কূটনীতিকরা মুক্তভাবে চলাচল করতে পারবেন, যেখানেই যেতে চান, যেতে পারেন। যদি মনে করেন, সহযোগিতার দরকার আছে, আমরা সেটা করব। রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ রক্তপাত নিয়ন্ত্রণে পুলিশি পদক্ষেপ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটার ব্যাপারে আরও একটু সতর্ক হওয়ার ব্যাপারে আমাদের বলেছেন। আমরা বলেছি, নাফ নদের ওইপারে মিয়ানমারের সীমান্ত। কিছুটা দুর্গম পথ রয়েছে, বাকিটা সহজ। যে কারণে তারা প্রবেশ করতে পারছে। মিয়ানমারের সঙ্গে আরাকান আর্মির যুদ্ধ চলছে। চেহারা একই রকম হওয়ায় আমাদের এখানে আরাকান আর্মিরা ঢুকে পড়ে, সে কারণে মাঝেমাঝে দুই-একটা ঘটনা ঘটছে। আমরা বিজিবি ও কোস্টগার্ডকে আরও সতর্ক থাকতে বলেছি, যাতে তারা ঢুকতে না পারে। মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে একটা সুন্দর আবাসনের ব্যবস্থা করেছি। সেখানে ১ লাখ মানুষ থাকতে পারে। একটি সুন্দর এলাকা তৈরি করে দিয়েছি। তখন তিনি সেখানে মেডিকেল ইভাকুয়েশন সিস্টেম তৈরি করতে বলেছেন। আসাদুজ্জামান খান বলেন, আমি বলেছি, আমাদের কোস্টগার্ড সেখানে সবসময় তৈরি থাকে। যে কোনো প্রয়োজনে তারা প্রস্তুত থাকে। আরও দ্রুত কীভাবে সেখান থেকে মেডিকেল ইভাকুয়েশন করা যায়, তারা সে সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। সেই পরামর্শ অনুসারে কাজ করব বলে তাকে জানিয়ে দিয়েছি। তিনিও স্বীকার করেছেন, ভাসানচরে থাকলে রোহিঙ্গারা নিরাপদে থাকবে। সরকার চাপ দিয়ে বিএনপির সাবেক নেতাদের নির্বাচনে আনছে কি না প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কাউকে চাপ দিয়ে নির্বাচনে আনার চেষ্টা আওয়ামী লীগ করছে না। চাপের কোনো প্রশ্নই আসে না। এরা স্বপ্রণোদিত হয়ে আসছে। বিএনপির সাবেক নেতারা আমাদের (আওয়ামী লীগ) নেতাদের বাড়ি বাড়িও যাচ্ছেন। তারা ইলেকশন করবেন, করতে চান। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি বলেই দলটির নেতারা নতুন জোট করে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এভাবে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হবে কি না- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, যদি কেউ ইচ্ছা করে না আসে, তাহলে কি কাউকে জোর করে আনা যাবে? যারা মনে করছেন বাংলাদেশ সঠিক পথে যাচ্ছে, বাংলাদেশ যেভাবে চলছে সে অনুযায়ী একটা নির্বাচন অবশ্যম্ভাবী, নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা বদল হতে হবে, তারাই আসছেন। যারা মনে করছেন তারা জোর করে আসবেন, সন্ত্রাস দিয়ে আসবেন, গাড়ি ভাঙচুর করবেন, জ্বালাও-পোড়াও করবেন, মানুষ হত্যা করবেন, তাদের কথা আলাদা। যারা এগুলো চান না, তারা কিন্তু ইতোমধ্যে চলে আসছেন। ছোট দল, বড় দল সবই একাকার হচ্ছে।
গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ?ঘিরে সহিংসতার পর সারা দেশে মামলার সঙ্গে গ্রেফতারের সংখ্যাও কমেছে বলে দাবি করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবরের আগে সারা দেশে প্রতিদিন গড়ে ২ হাজারের কাছাকাছি বিভিন্ন অভিযোগে জেলখানায় যেত, গ্রেফতার করা হতো। আবার গড়ে ২ হাজারের কাছাকাছি রিলিজ হতো। আর ২৮ অক্টোবরের পরে এ সংখ্যা কমে আসছে। এখন গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ৮১৬ জন জেলে যাচ্ছে। এর নানাবিধ কারণ হতে পারে। মন্ত্রী বলেন, ২৮ অক্টোবরের আগে সারা দেশে প্রতিদিন গড়ে ৫৬৫টি মামলা হতো। আর ২৮ অক্টোবরের পরে এখন পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ৪৩৮টি মামলা হয়েছে। ১২৭টির মতো মামলা কমেছে। তারা যে বলছে রাজনৈতিক মামলায় যাকে পাচ্ছি বিএনপি নেতাদের ধরছি, মামলা করছি, এটা কিন্তু সঠিক নয়।
