নারায়ণগঞ্জে আন্দোলনের নামে চলছে বীভৎসতা। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের পানি খাওয়ানোর অপরাধে গার্মেন্ট কারখানাটিকে পুড়িয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১২৫ কোটি টাকার।
এমনটি কখনো ভাবতে পারেনি এসবি স্টাইল কম্পোজিট লিমিটেডের মালিক ও শ্রমিকরা। পুরো গার্মেন্টটি জ্বালিয়ে সর্বস্ব লুট করে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গার্মেন্টটির চারদিকে শুধু ছাই আর ধ্বংসস্তূপ। এমনই চিত্র দেখা গেছে কোটা আন্দোলনে নাশকতার শিকার ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের জালকুড়ির রাস্তার পশ্চিম পাশে এসবি স্টাইল কম্পোজিট লিমিটেড নামে গার্মেন্টের। ১৯ জুলাই কোটা আন্দোলনের সহিংসতায় পুরো গার্মেন্টটি দুর্বৃত্তরা লুটপাট ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করে। এতে পুড়ে যায় রপ্তানির জন্য প্রস্তুত আড়াই লাখ পিস পণ্য, গার্মেন্টের মেশিনারিজ, আসবাবপত্র, ল্যাপটপ, কম্পিউটারসহ পরিবহন গাড়ি। কারখানাটিতে বর্তমানে প্রায় ৭-৮ হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। প্রতি মাসে গার্মেন্টটি ৮ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, এ নাশকতায় প্রায় ১২৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে কারখানাটির। গতকাল পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, গার্মেন্টের ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে গার্মেন্টের চেয়ারম্যান শাজাহান মিয়া চোখের পানি ফেলছেন। গণমাধ্যমের পরিচয় দিয়ে কথা বলতেই ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন তিনি। আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, তৃষ্ণার্ত কেউ যদি আপনার কাছে পানি খেতে চায়, সেই পানি খাওয়ানোটা কি অপরাধ? ১৯ জুলাই লিংক রোডে সংঘাত চলছিল। ওই সময় কিছু শিল্পপুলিশের সদস্য গার্মেন্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের কাছে পানি পান করতে চায়। আমাদের আনসার সদস্যরা শিল্পপুলিশের সদস্যদের পানি পান করান। এর জের ধরে নাশকতাকারী দুর্বৃত্তরা আমাদের গার্মেন্টে প্রবেশ করে লুটপাট ও ভাঙচুর শেষে অগ্নিসংযোগ করে।
চোখ মুছতে মুছতে শাজাহান মিয়া আরও বলেন, কারখানার যেখানেই হাত দেই সেখানেই ছাই। আনুমানিক ১২৫ কোটি টাকার মালামাল শেষ। প্রতিদিন এখানে প্রায় ১ লাখ পিস মালের উৎপাদন ক্ষমতা ছিল। মাসে আমরা ৮-১০ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি করে থাকি। এখন পুরো রপ্তানি ব্যাহত হয়েছে। এ ক্ষতি থেকে উত্তরণে দুটি বিষয় উল্লেখ করে তিনি জানান, চলতি মাসের বেতন আগামী মাসের ৬ তারিখে আসবে ১২ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল আসবে ৪ কোটি টাকা। কারখানা পুড়ে যাওয়ায় পুরো বছরের কর্ম পরিকল্পনা বিঘিœত হয়েছে। কীভাবে বেতন দেব শ্রকিকদের? এক্ষেত্রে আমাদের সরকারি সহযোতিা বা বড় ধরনের লোন ছাড়া পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব হবে না। একটি বড় আর্থিক সাপোর্ট পেলেই আমরা ফের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব। এতে চলতি মাসের বেতন ও আমাদের ইউটিলিটি বিল পরিশোধে একটু সময় দরকার। এতে আমাদের কারখানায় কর্মরত প্রায় ৮ হাজার শ্রমিককে বেকার হতে রক্ষা করতে পারব। তিনি আরও জানান, শুধু আর্থিক সহযোগিতা নয়, আমাদের কারখানা শ্রমিক মালিক সবাইর নিরাপত্তা চাই। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ ছাড়া আমরা আর কোনো উপায় দেখছি না। ইতোমধ্যে আমরা ক্ষতির একটি তালিকা জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দিয়েছি। এ ছাড়া এ ধকল কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়ে একটি পরিকল্পনাপত্র আমরা প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক জানান, গার্মেন্টটি পরিদর্শন করেছি। এতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। মালিকপক্ষ প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। গার্মেন্টটি সহযোগিতা পেলে মালিক শ্রমিক সবার জন্য ভালো হবে।