শহরের অবস্থা ভালো না। তুমি বাবার বাড়িতেই থাক। আমি একটু পরে তোমাকে নিতে আসছি। কথাগুলো কোটা আন্দোলনের তাণ্ডবে গুলিতে নিহত সাজ্জাদ হোসেনের। মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে স্ত্রী কোহিনুর বেগমকে মোবাইল ফোনে শেষ এই কথা বলেছিলেন তিনি। সোমবার দুপুরে সাজ্জাদ হোসেনের স্ত্রীর সঙ্গে কথা হলে তিনি তার স্বামীর সঙ্গে এটাই শেষ কথা বলে জানান। রংপুর নগরীর কামালকাছনা এলাকার বাবু মিয়ার ছেলে নিহত সাজ্জাদ হোসেন (৩০)। তিনি পেশায় একজন সবজি বিক্রেতা ছিলেন। ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করতেন। ঘটনার দিন ১৯ জুলাই সিটি বাজারে গিয়েছিলেন ব্যবসার জন্য সবজি কিনতে। ওই সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় পুলিশের। সংঘর্ষে কৈলাশরঞ্জন স্কুলের গলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সাজ্জাদ হোসেন। সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষকে হারিয়ে দিশাহারা সাজ্জাদের স্ত্রী কোহিনুর বেগম। গত ১০ দিন থেকে পাড়া-প্রতিবেশীদের পাঠানো খাবার খেয়ে বেঁচে রয়েছেন। আগামী দিনগুলো কীভাবে চলবে, একমাত্র মেয়ের ভবিষ্যৎ কী হবে এই চিন্তায় তিনি অস্থির। কোহিনুর বেগম বলেন, ওই দিন আমি বাবার বাড়ি নগরীর আনছারি মোড়ে ছিলাম। সন্ধ্যার দিকে ফোনে আমার স্বামী বলেন, তুমি বাবার বাড়িতেই থাক আমি তোমাকে নিতে আসছি। এর কিছুক্ষণ পরই দুলাভাই মোবাইল ফোনে জানান, সাজ্জাদ মারা গেছেন। পাঁচ বছর বয়সী একমাত্র কন্যা জান্নাতি আক্তার স্থানীয় বিসমিল্লাহ মডেল মাদরাসার প্লে গ্রুপের শিক্ষার্থী। তার বাবা আর কোনোদিন ফিরে আসবে না, এটা বোঝার মতো বয়স হয়নি জান্নাতির। লোকজন দেখা করতে গেলে তাদের দিকে শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে জান্নাতি। তাদের বাড়িতে লোকজন আসার কারণ বুঝতে পারে না। সাজ্জাদের স্ত্রী কোহিনুর বেগম বলেন, একজন নিরপরাধ মানুষ সাজ্জাদ জীবনের প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের হয়ে আন্দোলনের শিকার হলো। এর দায় কে নেবে, এই সংসার এখন কীভাবে চলবে। সেই দিনের ঘটনায় সাজ্জাদ হোসেন ছাড়াও আরও পাঁচজন মারা যান রংপুরে।