বৃষ্টিতে পুরো গা ভিজে একাকার। কিন্তু সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। হাতে লাঠি, মুখে বাঁশি, গলায় আইডি কার্ড। এক বয়স্ক নারীকে গতকাল হাত ধরে রাজধানীর প্রগতি সরণির রাস্তা পারাপারে সাহায্য করছিলেন কলেজ শিক্ষার্থী রেজওয়ান রহমান। পাঁচ দিন ধরে ঢাকার এই ব্যস্ত সড়কটিতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের কাজ করছেন এই শিক্ষার্থী। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে রেজওয়ান বলেন, ‘সড়কে যান চলাচলে যাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি না হয়, এজন্য আমরা কয়েকজন বন্ধু স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছি। শিশু ও বয়স্ক অনেক পথচারী আছে যাদের ব্যস্ত সড়কের একপাশ থেকে অন্যপাশে যেতে সমস্যা হয়। এরকম পরিস্থিতিতে আমরা এগিয়ে যাই, তাদের সড়ক পারাপারে সাহায্য করি।’
শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর টানা ছয় দিন ধরে সড়কে শৃঙ্খলা ধরে রাখতে দিন-রাত বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সৌন্দর্যবর্ধনে বিভিন্ন দেয়াল ও স্থাপনায় গ্রাফিতিসহ বিভিন্ন সুন্দর নকশা ফুটিয়ে তুলছেন। এমনকি সড়ক পরিষ্কার ও গাছ লাগানোর কাজগুলোও করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের এই কাজের প্রশংসা করেছেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। অনেকে ভালোবেসে শিক্ষার্থীদের খাবার পানি, জুস, ছাতা, বিস্কুটসহ বিভিন্ন খাবার পৌঁছে দিয়েছেন।
গতকালও শিক্ষার্থীদের সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ঢাকার দেয়ালগুলোতে রংতুলির আঁচড়ে বিভিন্ন গ্রাফিতি ও নকশা ফুটিয়ে তুলতে দেখা যায়। বিশেষ করে গতকাল বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শেষে স্কুল পোশাকেই দলে দলে নিজেদের স্কুল-কলেজের আশপাশের সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি দেয়ালে দেয়ালে নানান চিত্রকর্ম ফুটিয়ে তুলতে দেখা যায়। তবে টানা ছয় দিন পর গতকাল থেকে রাজধানী ঢাকার কিছু সড়কে দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা।
গতকাল রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে গিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীরা নিজের টাকায় সড়কে কাজ করছেন, সড়ক পরিষ্কার করছেন, রং কিনে দেয়াল সুন্দর করছেন। এটা যদি সরকারি প্রজেক্ট হতো তাহলে হাজার কোটি টাকা লাগত। একটা দেশে এর চেয়ে ভালো উদাহরণ হতে পারে না। তিনি বলেন, যেসব শিক্ষার্থী রাস্তায় ট্রাফিকের কাজ করছেন তাদের তালিকা করে সবাইকে পুলিশের পক্ষ থেকে সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। এই সার্টিফিকেট চাকরির ক্ষেত্রে যেন মূল্যায়ন হয়।
এ সময় হাসপাতালে উপস্থিত পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. ময়নুল ইসলাম সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ট্রাফিক পুলিশের কাজে ফেরার কথা জানান। তিনি বলেন, এরই মধ্যে ইন্টারকন্টিনেন্টাল সিগন্যাল থেকে জাহাঙ্গীর গেট পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা কাজ শুরু করেছেন। ধীরে ধীরে সব সড়কে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা কাজ শুরু করবেন। তবে এসব সড়কে শিক্ষার্থী, বিএনসিসি ও স্কাউটের সদস্যরাও আছেন। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে যেন শিক্ষার্থীদের কোনো ভুলভ্রান্তি না হয়, সেজন্য ছাত্র সমন্বয়কদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে।