দেশের বিভিন্ন জায়গায় বন্যার্তদের সহযোগিতা করছে দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। এরই অংশ হিসেবে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসবাসরত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে ও সার্বিক সহযোগিতায় বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে বৃহৎ এই শিল্পগোষ্ঠী। কর্মসূচির আওতায় কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালীসহ বন্যাদুর্গত বিভিন্ন এলাকায় শুকনা খাবারসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। যতদিন পর্যন্ত বন্যা থাকবে ততদিন পর্যন্ত এ ত্রাণ কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) এক নম্বর হল শুলনকশাতে গিয়ে দেখা গেছে, বসুন্ধরায় অবস্থিত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুরো উদ্যমে কাজ করছেন। কেউ গুড় কেউ চিড়া প্যাকেট করছেন। কেউ ওষুধের প্যাকেট আলাদা করছেন। আবার কেউ ধরে আছেন বস্তার মুখ, যেখানে সব আইটেম এক বস্তায় পুরে নেওয়া হচ্ছে আরেক পাশে। এরপর ট্রলিতে করে বসুন্ধরার বড় লরিতে তোলা হচ্ছে এসব পণ্য। প্রতিটি বস্তায় রয়েছে টোস্ট বিস্কুট, জরুরি ওষুধ, ওরস্যালাইন, চিড়া, গুড়, মুড়ি, পানির বোতল, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট। এ ছাড়াও নারীদের জন্য দেওয়া হচ্ছে স্যানিটারি ন্যাপকিন, বাচ্চাদের জন্য ডায়াপার।
শিক্ষার্থীরা জানান, এ মহৎ উদ্দ্যেগে বসুন্ধরা এগিয়ে আসার জন্য বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। দেশের ক্রান্তিকালে বসুন্ধরা সব সময় দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ায়। এ ধরনের মানবিক কাজে সহযেগিতা করতে ক্লান্তি আসে না বলে জানান তারা। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইফতেখার শাহরিয়ার বলেন, আমি বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ নিয়ে ফেনীতে বিতরণ করে আসলাম। সেখানে ব্যাপক মানবিক বিপর্যয় দেখেছি। মানুষ যে খাবারের জন্য অসহায় হতে পারে সেখানে না গেলে বোঝা যেত না। আজকে এখান থেকে ত্রাণ নিয়ে ফেনী এবং কুমিল্লার উদ্দেশে যাবে ট্রাকগুলো। এসব ত্রাণ পেলে বন্যার্ত মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা কমবে।
গ্রিন ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষার্থী জুয়েল রানা বলেন, এখানে আমরা এসেছি ত্রাণ প্যাকেজিংয়ের জন্য। আমরা প্রথমে বসুন্ধরার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা প্রাথমিকভাবে ২৫ হাজার প্যাকেট দেওয়ার জন্য বলেছে। এখন বসুন্ধরার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যত পরিমাণ ত্রাণ লাগবে বসুন্ধরা দিতে প্রস্তুত আছে। আমাদের বিভিন্ন টিম বন্যাকবলিত এলাকায় রয়েছে। তারা যেসব জিনিসের কথা আমাদের জানায়, আমরা তা বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষকে জানাই। তারা সে অনুযায়ী আমাদের সরবরাহ করে। এ জন্য বসুন্ধরা গ্রুপকে আমার হৃদয়ের অন্তস্তল থেকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা চাই অন্যান্য বড় শিল্প গ্রুপ বসুন্ধরার মতো এগিয়ে আসুক।
ত্রাণ কার্যক্রম তদারকি করা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) অ্যাকাউন্টস, ফাইন্যান্স অ্যান্ড অপারেশনের হেড অব ডিভিশন মো. মনিরুল ইসলাম (পলাশ) বলেন, ‘আমরা বন্যাকবলিত মানুষের পাশে শুরু থেকেই চেয়ারম্যান স্যারের নির্দেশনায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এখান থেকে প্রতিদিন ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চিটাগংয়ের উদ্দেশে প্রায় ১০ হাজার প্যাকেট ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে টোস্ট বিস্কুট, জরুরি ওষুধ, ওরস্যালাইন, চিড়া, গুড়, মুড়ি, পানির বোতল, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়াপার। যতদিন পর্যন্ত বন্যা থাকবে এবং শিক্ষার্থীরা চাইবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের এ ত্রাণ কার্যক্রম চলমান থাকবে। বসুন্ধরা গ্রুপের সিনিয়র অ্যাসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট গোলাম কিবরিয়া বলেন, যতদিন পর্যন্ত এ দুর্যোগ থাকবে ততদিন পর্যন্ত বসুন্ধরা গ্রুপ ত্রাণ দিতে থাকবে। আমরা এখানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ত্রাণ পাঠাচ্ছি। অনেক জায়গায় শিক্ষার্থী ছাড়াও আমাদের ত্রাণ কার্যক্রম চলমান আছে। যেখানে যেখানে বন্যার প্রভাব বেশি থাকবে সেখানেই আমরা ত্রাণ কার্যক্রম চলমান রাখব। আমাদের সারা দেশের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার জনবল রয়েছে। গত সাত আট দিন ধরে আমাদের অনেকে রাত দিন না ঘুমিয়ে ত্রাণ কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।