ছয় খলনায়কের নিয়ন্ত্রণে ছিল আইসিটি মন্ত্রণালয়। তাদের সর্দার ছিলেন খোদ সজীব ওয়াজেদ জয় নিজেই। বিদেশে বসে থেকেই ‘নগদ’ স্বত্বাধিকারী তানভীর মিশুক, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক ডেপুটি প্রেস সচিব আশরাফুল হক খোকন, দেবীদ্বারের এমপি আবুল কালাম আজাদ, চট্টগ্রামের যুবলীগ নেতা নিয়াজ মোর্শেদ এলিটকে দিয়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলেন সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। অন্যদের বিষয়ে তথ্য দিলেও নিজের দুর্নীতির বিষয়টি কবুল করছেন না তিনি। গ্রেপ্তারের পর থেকেই তিনি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে রিমান্ডে রয়েছেন। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ১ আগস্ট নিজে পদত্যাগ করার জন্য দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছিলেন পলক। তার নির্বাচনি এলাকা নাটোর থেকে ফিরেই এমন সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে তিনি বলেছিলেন, শেখ হাসিনাকে সামনে থেকে কেউ কিছু না বললেও সাধারণ মানুষ তাকে ঘেন্না করে। দ্রুতই তার পদত্যাগ করা উচিত। তবে তারা তাকে এই কাজটি করতে দেননি। বলেন, কোনোভাবে শেখ হাসিনা টিকে গেলে তার ভয়ঙ্কর পরিণতি হতে পারে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন আগস্টের শুরুতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিলে সারা দেশে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ৫ আগস্ট আন্দোলনকারীদের ঢাকামুখী লংমার্চের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর সরকারের মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের প্রায় সবাই আত্মগোপনে চলে যান। কেউ কেউ আগেই দেশ ছাড়েন। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে ছাত্র-জনতা নিহতের ঘটনায় মামলা শুরু হয়। এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও তার সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপি ও দলের নেতাদের আসামি করা হচ্ছে। এসব মামলায় মন্ত্রী-এমপিসহ শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে থাকা অন্যদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। রিমান্ডে এরই মধ্যে তথ্য দিতে শুরু করেছেন শেখ হাসিনার সাবেক বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ১৩ আগস্ট রাজধানী ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৯ আগস্ট রাজধানীর বাড্ডা থানায় করা সুমন শিকদার হত্যা মামলায় আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এর আগে পৃথক ৩ মামলায় আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানের মোট ২০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন আদালত। ২৮ আগস্ট রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে রাজধানীর বাড্ডা থানায় দায়ের করা সুমন শিকদার নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ২৯ আগস্ট তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে বাড্ডায় ফুজি টাওয়ারের সামনে সুমন সিকদারকে (৩১) গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তার মা মাসুমা বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৭৯ জনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান ও টিপু মুনশিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার তাদের রিমান্ডে আনা হয়েছে। তাদের সুমন শিকদারকে হত্যার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সেখানে কার কী ভূমিকা ছিল তা জানতে চাওয়া হচ্ছে। রিমান্ডের প্রথম দিন গতকাল তারা বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার আদালতের শুনানিতে আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমান বলেন, যে হত্যা মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে, এর সঙ্গে তারা কোনোভাবে জড়িত নন। বরং তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন।