আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আগামীকাল বুধবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টায় ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসের টেলিভিশন বিতর্কের প্রতি দেশ-বিদেশের মানুষের অশেষ কৌতূহল। কারণ এর আগে জো বাইডেন ও ট্রাম্পের মধ্যে সিএনএন আয়োজিত টিভি বিতর্কে সঞ্চালকের নির্দেশনা অবজ্ঞা করে বাইডেনকে লাগাতার আক্রমণ করেছিলেন ট্রাম্প। ট্রাম্পকে থামাতে পারেননি সঞ্চালক। এবিসি টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আয়োজিত বুধবারের বিতর্কটি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সঙ্গে এটাই কমলার প্রথম ও শেষ বিতর্ক। ফলে নিজের ভোটারকে সন্তুষ্ট করার পাশাপাশি সিদ্ধান্তহীন ভোটারকে পক্ষে আনতে এই বিতর্কের ভূমিকা অপরিসীম বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ইতোমধ্যেই ঘোষিত নির্বাচনি অঙ্গীকারের ব্যাখাও দিতে হবে সবিস্তারে। এ ছাড়া অপ্রত্যাশিত কিছু ইস্যুতেও কথা বলতে হবে অত্যন্ত গোছালোভাবে। ট্রাম্প এবং কমলা এই প্রথম মুখোমুখী হতে যাচ্ছেন। একজন আরেকজনকে কীভাবে স্বাগত জানান বিতর্কের মঞ্চে, সেটিও প্রভাব ফেলবে দলনিরপেক্ষ ভোটারের ওপর। উভয়ে হোয়াইট হাউসে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞ। তবে ট্রাম্পের মতো কমলার একক কৃতিত্ব কতটা ছিল বাইডেনের পাশাপাশি, সেটি গুরুত্ব পাবে অধিক। ট্রাম্পের কৃতিত্ব কতটা ছিল প্রথম টার্মে, তা নতুন ভোটারের অনেকেই জানেন না। তাই এবারের বিতর্কে সাফল্য-ব্যর্থতা এবং যুক্তির আলোকে ব্যাখ্যা প্রদানের ব্যাপারটি গুরুত্ব পাবে। এ ক্ষেত্রে কমলা যে অধিক পারদর্শিতা প্রদর্শনে সক্ষম হবেন, এটা প্রায় নিশ্চিত। কারণ, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের সঙ্গী রয়েছেন কমলা এখনো। নানা ইস্যুতে কমলাকে ঘায়েলের চেষ্টা করা হয়েছে এবং হচ্ছে কিন্তু কখনোই উত্তেজিত হয়ে অসংলগ্ন জবাব দিতে দেখা যায়নি কমলাকে। পক্ষান্তরে কথায় কথায় উত্তেজিত হওয়ার অভ্যাস রয়েছে ট্রাম্পের। শুধু তাই নয়, প্রতিপক্ষকে আক্রমণের অভিপ্রায়ে অসংলগ্ন মন্তব্য ছুড়ে দিতেও দ্বিধা করেন না ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় এবং হোয়াইট হাউস ত্যাগের পর বহুবার প্রতিষ্ঠিত অনেক সত্যকে অস্বীকারের ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন ট্রাম্প। অসত্য তথ্য উপস্থাপনেও জুড়ি নেই ট্রাম্পের। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এমন অভ্যাস যদি এই বিতর্কেও অব্যাহত থাকে তাহলে পোয়াবারো হবে কমলার।
তবে গাজা পরিস্থিতিতে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে কমলার ভূমিকা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ডেমোক্র্যাটদের মনোভাবের প্রকাশ ঘটাতে হবে এবং নির্বাচিত হলে কমলা কী করবেন তা-ও উপস্থাপন করতে হবে। ট্রাম্পের অবশ্য যুদ্ধ লাগানোর কোনো ইতিহাস নেই। তবে আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক তৈরির উদাহরণ রয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ট্রাম্প আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অটুট রাখতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন, সেসব বিবৃত করতে হবে এ বিতর্কে এবং এ বিষয়টি ট্রাম্পের ভোট ব্যাংকে বিস্তর প্রভাব রাখবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। অভিবাসন ইস্যুতে ট্রাম্পের মনোভাব নতুন করে বলার না থাকলেও কমলাকে বিস্তারিতভাবে জানাতে হবে। কারণ, ডেমোক্র্যাটরা এর আগে বেশ কবার অঙ্গীকার করেও কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের সমস্যার সমাধানে কোনো উদ্যোগই নেয়নি তারা। অধিকন্তু বাইডেনের আমলে দক্ষিণের সীমানা দিয়ে লাখ লাখ বিদেশিকে স্বাগত জানানোর গুরুতর অভিযোগ রয়েছে বাইডেন-কমলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে। করোনা থেকে জেগে ওঠার পরিক্রমায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য হ্রাসে বাইডেন-কমলার ভূমিকা কতটা আন্তরিক ছিল, সে প্রশ্নের জবাবও দিতে হবে কমলাকে। কারণ, বাইডেন-কমলা প্রশাসন এ ক্ষেত্রে তেমন কিছুই করতে পারেননি। অধিকন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধজনিত পরিস্থিতি জিইয়ে রাখার মাধ্যমে স্বল্প ও মাঝারি আয়ের আমেরিকানদের পেটে লাথি মারার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ‘নয়া পথে এগোনো’র স্লোগান দিয়েছেন কমলা হ্যারিস। সেই পথটি কীরকম হবে, সে প্রশ্নও আসতে পারে বিতর্কে।