চট্টগ্রাম বন্দরের ডলফিন জেটিতে নোঙর করা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) জাহাজ বাংলার জ্যোতিতে গত সোমবার সকালে বিস্ফোরণের পর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন নিহত হন। এ ঘটনার পর পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসসি এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এরই মধ্যে বিপিসি গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সোমবার রাতেই বিপিসি প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দেন কমিটির আহ্বায়ক ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. শরিফ হাসনাত। প্রতিবেদনে চারটি সুপারিশ করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে- বিএসসির বিদ্যমান লাইটার জাহাজ এমটি বাংলার জ্যোতি ও এমটি বাংলার সৌরভ ব্যবহারের উপযুক্ততা নির্ধারণ করতে কারিগরি কমিটি গঠন করা, ক্রুড অয়েল লাইটারিং কার্যক্রম পরিচালনা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আমদানি করা ক্রুড অয়েল খালাসের জন্য সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন অবিলম্বে চালু করা, এমটি বাংলার জ্যোতি জাহাজকে কার্যকরভাবে ব্যবহার উপযোগী করা সম্ভব কিনা বা সম্ভাব্য বিকল্পের বিষয়ে বিএসসির মতামত গ্রহণ করা এবং জেটিসমূহে বিদ্যমান অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাদি আরও আধুনিকায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের একাধিক সূত্র জানায়, একটি জাহাজের আয়ুষ্কাল থাকে ২০ থেকে ২৫ বছর। এর পর তা আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল করতে পারে না। কিন্তু বাংলার জ্যোতি ১৯৮৭ সালে তৈরি করা হলেও স্ক্র্যাপ ঘোষণা করা হয়নি। প্রতিনিয়ত মেরামত করে গত ৩৭ বছর ধরে জাহাজটির মাধ্যমে পরিবহন করা হয়েছে জ্বালানি তেল।
বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেক বলেন, ‘জাহাজের আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে সত্য। তবে যান্ত্রিক ক্রটির জন্য দুর্ঘটনাটি ঘটেনি। জাহাজটি দেশের স্বার্থে, জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছিল। এসপিএম পুরোপুরি কার্যকর হলে তেল পরিবহনে আমাদের ট্যাংকার জাহাজ ব্যবহারের আর প্রয়োজন হবে না।’বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের একাধিক সূত্র জানায়, ১৯৮৭ সালে তৈরি হওয়া বাংলার জ্যোতি এক সময় বিদেশ থেকে জ্বালানি তেল পরিবহন করত। ২০১৫ সালে বৈশ্বিকভাবে সিঙ্গেল হাল অয়েল ট্যাংকের জ্বালানি তেল পরিবহন নিষিদ্ধ করার পর আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল বন্ধ হয় জ্যোতির। এর পর নৌ-বাণিজ্য দপ্তর থেকে স্পেশাল অর্ডার নিয়ে জাহাজটি কোস্টাল ভ্যাসেল হিসেবে বহির্নোঙর থেকে জেটিতে তেল খালাসের কাজ করে আসছে। ২০১৯ সালে জাহাজটিকে চলাচলের আনফিট ঘোষণা করা হয়। ওই সময় এ জাহাজকে স্ক্র্যাপ করার কথাও উঠে। এর পর কিছুদিন জাহাজটি চলাচল বন্ধ ছিল। পরে মেরামত করে জাহাজটিকে আবার চলাচলের উপযোগী করে ক্লাসের অধীনে লাইসেন্স নবায়ন করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে জাহাজটি কোস্টাল ভ্যাসেল হিসেবে তেল লাইটারিংয়ের কাজে ব্যবহার হলেও জাহাজটির লাইসেন্স হালনাগাদ নেই বলে জানা গেছে।