মোবাইল ফোনে ভয়েস কল ও ইন্টারনেট ব্যবহার দ্রুতগতিতে কমছে। জুন মাসে দেশে মোবাইল গ্রাহক ছিল ১৯৬ দশমিক ৮ মিলিয়ন। সেপ্টেম্বরে সেটা কমে হয়েছে ১৯০ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন। প্রায় একই চিত্র ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রেও। জুন মাসে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিলেন ১৪২ দশমিক ১৭ মিলিয়ন। সেপ্টেম্বরে সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ১৩৮ দশমিক ৬২ মিলিয়নে। মোবাইল অপারেটররা বলছেন, অক্টোবরে ওই চিত্র আরও খারাপ। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি শিগগিরই মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সর্বশেষ তথ্য তুলে ধরবে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের পক্ষ থেকে দেশের শীর্ষ তিন মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা মোবাইল ইন্টারনেট ও ভয়েস কমার জন্য ভিন্ন ভিন্ন কারণ তুলে ধরেন।
গ্রামীণফোন লিমিটেডের চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) অটো রিসব্যাক বলেন, বেশ কিছুদিনের অস্থিতিশীলতা ও ইন্টারনেট শাটডাউন এবং বিভিন্ন অঞ্চলে নজিরবিহীন বন্যার কারণে অর্থনীতি ও আমাদের ব্যবসায় বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে আমাদের আয় ৩ দশমিক ৮ শতাংশ কমে ৩ হাজার ৯৫০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে, যেখানে ইবিআইটিডিএ ৮ দশমিক ৭ শতাংশ কমে হয়েছে ২ হাজার ৩২০ কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে ২০১৯ সালের জুন থেকে রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার হিসেবে কর্মরত মোহাম্মদ সাহেদুল আলম বলেন, সবমিলিয়ে মোবাইল রেভিনিউ কমেছে। এ জন্য দুটি কারণ রয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি। প্রথমত, ৫ আগস্টের আগে যখন ইন্টারনেট বন্ধ ছিল তখন থেকে অনেক সিম হারিয়ে গেছে। তার মানে তারা আর ইন্টারনেট ব্যবহার করেননি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ভয়েস ও ডেটার ব্যবহার দুটোই অনেক বেশি ছিল। পরে দ্রুত তা কমেছে। ডেটা ও ভয়েস কমার দ্বিতীয় কারণ হতে পারে সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা। তিনি বলেন, সম্প্রতি আমাদের ১০ থেকে ১২ পার্সেন্ট গ্রাহক কমেছে। প্রত্যেক অপারেটরের গ্রাহক কমায় এ বছর মোবাইল ব্যবসায় বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করি। একই প্রসঙ্গে বাংলালিংকের করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান তাইমুর রহমান বলেন, দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় মানুষ এখন মোবাইলে খরচ কমিয়েছে বলে মনে করি। গত তিন-চার মাস ধরে এ অবস্থা চলছে। ভয়েস ও ডেটার এ ধরনের কম গ্রাহক অতীতে কখনো হয়নি। তিনি বলেন, সম্প্রতি ভয়েস কল ১০ ভাগ কমেছে আর ইন্টারনেট ব্যবহার কমেছে ১৫ ভাগ। এটা কিছুটা নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিটিআরসির দেওয়া চার মাসের মোবাইল ভয়েস ও ডেটা ব্যবহারের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জুন মাসে চার অপারেটরের মোট গ্রাহক ছিল ১৯৬ দশমিক ০৮ মিলিয়ন। জুলাইয়ে কমে হয় ১৯৪ দশমিক ২৬, আগস্টে ১৯২ দশমিক ৪৩ ও সেপ্টেম্বরে ১৯০ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন। একইভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুন মাসে মোট ব্যবহারকারী ছিলেন ১৪২ দশমিক ১৭ মিলিয়ন। জুলাই মাসে কমে হয় ১৪১ দশমিক ০৫ মিলিয়ন, আগস্টে ১৪০ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ও সেপ্টেম্বরে ১৩৮ দশমিক ৬২ মিলিয়ন। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত তিন মাসে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ফ্রিল্যান্সারদের কাজ বেশির ভাগই বিদেশে চলে গেছে। যার ফলে ইন্টারনেট ডেটার ব্যবহার বহু কমে গেছে- এ কথা সত্য। পাশাপাশি নাগরিকের তথ্য নিরাপত্তার কারণে ভয়েস কলের পরিমাণও অনেকটা কমে গেছে। দুর্বল ইন্টারনেট ও নেটওয়ার্ক দুর্বলতাও অনেকাংশে দায়ী।