রাজশাহীর চারঘাটে পদ্মার শাখা নদ এককালের প্রমত্ত বড়াল এখন অস্তিত্ব হারিয়ে বিস্তীর্ণ ফসলের খেতে পরিণত হয়েছে। বড়ালের বুকে এখন চাষ হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফসল। অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ এবং যাতায়াতের জন্য নদের বুকে একাধিক ব্রিজ নির্মাণ করে স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া দখলদারদের দখলে দুই পাড় দখল হয়ে গেছে। একসময়ের খরস্রোতা বড়াল আজ শুধুই স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, পদ্মার পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক রাখতে এবং নাব্য ফিরিয়ে আনতে বড়াল নদকে ঘিরে সর্বশেষ ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ‘নাটোরের নারদ ও মুসা খান (আংশিক) নদ ও রাজশাহীর চারঘাটের রেগুলেটরের ইনটেক চ্যানেল খনন’ নামে ১৩ কোটি ৩ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। প্রায় ১৯ দশমিক ১০ কিলোমিটার নদ খনন ও প্রবেশমুখে খনন করতে এই অর্থ ব্যয় হয়। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে চারঘাট বড়াল নদের ইনটেক চ্যানেল খননকাজ শেষ হয়। ইনটেক চ্যানেল খননকাজ শেষ হলেও তারপর থেকে বর্ষাকালেও বড়ালে পানি আসেনি।
এ ছাড়াও গত বছরের জুলাই মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ড বড়ালের উৎসমুখে ৪৫০ মিটার বড়াল পুনঃখনন কাজে পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে ৫২ লাখ টাকার কাজ করে। সেই কাজে ব্যাপক অনিয়ম হয়। দায়সারা কাজ করার কারণে খনন করা বালু আবার নদীতে চলে যায় বলে দাবি স্থানীয়দের। ফলে এ প্রকল্পও আলোর মুখ দেখেনি। তবে অপচয় হয়েছে বিপুল সরকারি অর্থের। জানা গেছে, প্রমত্ত পদ্মা নদীর শাখা নদ হিসেবে বড়ালের উৎপত্তি হয়ে রাজশাহীর চারঘাট, বাঘা, নাটোরের বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রাম, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে বাঘাবাড়ি হয়ে হুরা সাগরের বুকে মিশে নাকালিয়ায় যমুনায় মিলেছে। শরিফুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক শিক্ষক জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৯৮১-৮২ অর্থবছরে নদীর তীরবর্তী উপজেলাগুলো বন্যামুক্ত করার জন্য উৎসমুখ চারঘাটে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে পানির স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়। বিভিন্ন স্থানে স্লুইসগেট ও বাঁধ নির্মাণের ফলে ক্রমান্বয়ে বড়াল নদ শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হতে থাকে তখন থেকেই। বর্ষায় নদীতে কিছু পানি জমলেও শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই শুকিয়ে মরা নদীতে পরিণত হয়। এবারও তাই হয়েছে। এখন এলাকার কৃষকরা বিস্তীর্ণ নদীর বুকে আবাদ করেন। শুষ্ক মৌসুমে পরিণত হয় গবাদিপশুর চারণক্ষেত্র। একসময় যে বড়ালের পানিতে নদ তীরবর্তী মানুষ তাদের জমিতে ফসল ফলাত, এখন সে নদের বুকে অগভীর নলকূপ বসিয়ে হয় ধান চাষ। স্থানীয় স্কুলশিক্ষক জাকারিয়া হোসেন জানান, নদীতে পানি না থাকায় এ নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ব্যবসাবাণিজ্যের কেন্দ্রগুলো তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। সেচসহ প্রতিদিনের প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করায় পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। এখনই সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করে নদীটি পুনঃখনন করা না হলে বড়াল নদই এক দিন হারিয়ে যাবে মানচিত্র থেকে। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর জানান, বড়াল খনন করা হয়েছিল। আবারও খননের উদ্যোগ নিতে হবে। এনিয়ে তারা সরকারের কাছে প্রস্তাবনাও দিয়েছেন। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ না থাকায় খনন কাজ করা যাচ্ছে না।