পটুয়াখালীর উৎপাদিত মুগ ডাল দেশের সীমানা ছাড়িয়ে রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও কোরিয়ায় যায় বাংলাদেশের মুগ ডাল। উৎপাদন সহায়ক জমির উর্বরতা, ভালো ফলন ও বেশি দাম পাওয়ায় রবি মৌসুমে পটুয়াখালীর বেশির ভাগ জমিতেই মুগ ডাল আবাদ করছেন কৃষকরা। ফলে প্রতি মৌসুমেই মুগ ডাল চাষ ও উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মুগের আবাদ, পরিচর্যা আর ফলন ঘরে তুলতে কর্মসংস্থানও হচ্ছে অনেকের। চলতি মৌসুমের উৎপাদিত মুগডালের বাজারমূল্য হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখন দেশের তিন ভাগের এক ভাগ মুগ ডাল উৎপাদন হচ্ছে পটুয়াখালীতে। দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে মুগ ডাল। এখন মাঠ থেকে মুগ ডাল ঘরে তুলে বাজারজাত করতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকরা।
পটুয়াখালী কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সরকারি হিসেবে চলতি রবি মৌসুমে পটুয়াখালী জেলায় ৮৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে মুগ ডাল আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আবাদ হয়েছে ৮৮ হাজার ৮৯১ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সদর উপজেলায়ই আবাদ হয়েছে ১৮ হাজার ৭২১ হেক্টর জমিতে। বিগত মৌসুমে হেক্টর প্রতি ১ হাজার কেজি মুগডাল পাওয়া গেলেও এ বছর হেক্টরপ্রতি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ১৫০ কেজি। চলতি মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ ধরা হয়েছে ৯৮ হাজার ২৩৪.১৫ মেট্রিক টন। ১০০ টাকা কেজি দরে যার বাজারমূল্য ৯৮২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এ ছাড়া এখনো মাঠে রয়েছে ৪ শতাংশ ডাল। কৃষকরা জানান, জমিতে কোনোরকম দুটি চাষ দিয়ে অল্প খরচ আর কম পরিশ্রমে দুই থেকে আড়াই মাসে মুগডালের ফলন ঘরে তোলা যায়।
কৃষকদের খরচ হয় হেক্টরপ্রতি ৫০ হাজার টাকা। বাজারে মুগডালের ভালো দাম আর চাহিদা থাকায় কৃষকরা এ ডাল আবাদে দিন দিন উৎসাহিত হচ্ছেন। কৃষি অধিদপ্তর পটুয়াখালী খামারবাড়ির উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, এ জেলায় উৎপাদনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট ৬ জাতের মুগডাল চাষ করা হয়। এর মধ্যে বারী-৬ জাতের মুগডাল আকারে বড় হওয়ায় এ ডাল অঙ্কুরোদগম (অঙ্কুরিত) করে খায় জাপানিরা। তাই বিগত কয়েক বছর ধরে এ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে জাপানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে মুগডাল রপ্তানি হয়। জাপানের একটি কোম্পানির মাধ্যমে মুগডাল সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। ওদের তালিকাভুক্ত সাড়ে ৩ হাজারের মতো কৃষক আছে যাদের কাছ থেকেই মূলত ওরা মুগডাল সংগ্রহ করে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। এ ছাড়া গত মৌসুমে খুলনা থেকে বেসরকারি একটি পার্টি এসে মুগডাল সংগ্রহ করে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়েছে এবং কোরিয়ায় কিছু রপ্তানি হয়েছে। তিনি আরও জানান, মুগডাল উৎপাদনের ক্ষেত্রে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয় এ অঞ্চলে। সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া এলাকার কৃষক মো. আতিক হাওলাদার বলেন, এ বছর দুই একর জমিতে মুগডাল আবাদ করেছি।
একরপ্রতি আমার খরচ হয়েছে মাত্র ২০ হাজার টাকা। এ বছর ফলন বেশ ভালো হয়েছে। তবে প্রথম দিকে এক পসলা বৃষ্টি হলে গাছগুলো দ্রুত বেড়ে উঠত এবং শক্তিশালী হতো। তাহলে ফলন আরও বেশি হতো। দশমিনা উপজেলার মুগডাল আবাদি কৃষক কাজী কামাল বলেন, আমি এক একর জমিতে মুগডাল চাষ করেছি। আমার চাষের মেশিন আছে, তাই এক একরে মুগের আবাদ করতে আমার খবর হয়েছে ৬ হাজার টাকা। এ বছর আমি বেশি ফলন পেয়েছি। প্রায় ১৬ মণ (প্রতি মণ ৪৮ কেজি) মুগডাল পেয়েছি। এর মধ্যে খাওয়ার জন্য কিছু রেখে বাকি ডাল বিক্রি করে ৬৫ হাজার টাকা লাভ করেছি। বদরপুর এলাকার কৃষক মো. আলতাফ হোসেন বলেন, অন্যান্য রবি ফসলের তেমন ভালো দাম পাওয়া যায় না। তাই নাম মাত্র চাষ, কম শ্রমে কোনোরকম পরিচর্যা করেই এই ডাল চাষ করা যায়। তাই দিন দিন মুগডাল চাষে আরও বেশি উৎসাহিত হয়ে পড়ছে এলাকার কৃষক। চলতি রবি মৌসুমে মুগডাল আবাদে গত বছরের তুলনায় আমাদের এলাকায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।