পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপন শেষে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। সরকারি ছুটি যদিও শেষ হয়নি, তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে শেষ হয়েছে ঈদের ছুটি। ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যারা কর্মরত রয়েছেন, তারা ফিরে আসছেন নিজ কর্মস্থলে।
গতকাল রাজধানীর গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল, কমলাপুর রেলস্টেশন ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে গ্রাম ছেড়ে আসা মানুষের ভিড়। কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা যায়, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, সিলেট, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ট্রেনে ঢাকায় ফিরছেন যাত্রীরা। স্টেশনজুড়ে দেখা গেছে যাত্রীর ভিড়। রাহাত নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, ‘ঈদের লম্বা ছুটি কাটালাম পরিবারের সঙ্গে। এবার কাজে যোগ দেওয়ার পালা। পরিবার রেখে কাজে ফেরা বরাবরের মতোই কষ্টের। মায়ের মুখটা বারবার ভেসে ওঠে। কিন্তু জীবনের বাস্তবতা তো মানতেই হবে।’ কমলাপুর স্টেশন মাস্টার মাজহারুল ইসলাম জানিয়েছেন, ফিরতি পথে ট্রেনের কোনো সংকট নেই।
সদরঘাটেও দেখা গেছে একই চিত্র। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে লঞ্চে ঢাকায় ফিরছে মানুষ। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ফিরোজ আলম বলেন, ‘এ কদিন গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে ছিলাম। এখন আবার ফিরলাম কর্মস্থলে। যানজট এড়াতে আগে আগেই ফিরলাম। ঈদের আনন্দ শেষ, এখন জীবনযুদ্ধ শুরু।’
রাজধানীর বিভিন্ন আন্তনগর বাস টার্মিনালে ঢাকায় ফেরা যাত্রীর ভিড় দেখা যায়। যাত্রীর চাপ বাড়লেও যানবাহনগুলোয় দুর্ভোগ নেই। এ ছাড়া যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। আবদুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ডে এক যাত্রী বগুড়া থেকে নামার পর বলেন, ‘ভাবছিলাম যাওয়ার সময় যেমন ভোগান্তি হয়েছিল, ফেরার সময় হয়তো তার কিছুটা হলেও কম হবে। তা-ই হয়েছে। সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। এমনকি আমাদের বাসটা নির্ধারিত সময়ের আগেই ঢাকায় এসে গেছে। পুরো পথে কোথাও কোনো যানজট চোখে পড়েনি। মাত্র চার ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছালাম। ভালো লাগছে কারণ কোনো যানজট পাইনি।’ পরিবহন কোম্পানির ১২ থেকে ১৪টি গাড়ি চলাচল করে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর রুটে। অন্য রুটেও একই অবস্থা। পরিবহন কোম্পানিটির টেকনিক্যাল সিনেমা হলের সামনে নামা যাত্রী আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদ করতে ঈদের দুই দিন আগে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম, আজ ফিরছি। সময়মতো ঢাকায় ফেরা নিয়ে সন্দেহ ছিল, তবে আসার পথে তেমন জ্যাম ছিল না। ভালোয় ভালোয় চলে এসেছি।’
রাজশাহী, নওগাঁ, বগুড়া ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসা হানিফ পরিবহনের কোচগুলোও যাত্রীতে ভর্তি। পরিবহনটির কাউন্টার মাস্টার আবদুল আওয়াল জানান, ‘ঢাকা আসতে হানিফের ১৭ তারিখ পর্যন্ত সব টিকিট বুক হয়ে আছে। চলতি সপ্তাহ এবং আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত মানুষের চাপ থাকবে বলে আশা করি।’
রাজশাহী থেকে ঢাকা এসেছেন এম এ করিম। তিনি একজন ব্যবসায়ী। বলেন, ‘ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বুধবার কাজ শুরু হয়েছে। আজ পরিবারসহ ঢাকায় ফিরছি। বিকালে ব্যবসার কাজে অফিসে যাওয়ার চেষ্টা করব।’
ঢাকা-চাঁদপুর রুটে চলাচল করা আল আরাফা এক্সপ্রেসের এক বাসের চালক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকায় আসা যাত্রী বেড়েছে। গাড়ি মোটামুটি ভরেই ঢাকায় এসেছি। রাস্তায় কোনো ঝামেলাও হয়নি।’
কুমিল্লা থেকে বাসে ঢাকায় ফিরেছেন শাহনাজ বেগম, তাঁর মা এবং সন্তান। সায়েদাবাদে কথা হয় শাহনাজ বেগমের সঙ্গে। বলেন, ‘আমরা যাব সিপাহীবাগ। সিএনজিচালিত অটোরিকশা ৫০০ টাকা ভাড়া চাচ্ছে, যেখানে ভাড়া সর্বোচ্চ আড়াই শ। গাড়ি আছে অনেক কিন্তু ভাড়া বেশি চাচ্ছে।’
এদিকে মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে রাজধানীমুখী পরিবহনের চাপ বাড়ছে। আগামী তিন-চার দিন বাড়তি চাপ থাকতে পারে। অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সার্বক্ষণিক কাজ করছে। বাড়তি টহল টিম রয়েছে মহাসড়কে।
মাদারীপুরের শিবচর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম জানান, মহাসড়কে পরিবহনের বাড়তি চাপ রয়েছে। অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণসহ যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে মহাসড়কে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।