জবাবদিহির নতুন কাঠামোর আওতায় আসছে পুলিশ। অতীতের অনিয়ম-নির্যাতনের অভিযোগের কাঠগড়ায় থাকা এ বাহিনীতে আমূল সংস্কারে কঠোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। গ্রেপ্তার, তল্লাশি, জিজ্ঞাসাবাদ, এমনকি বেআইনি সমাবেশে বলপ্রয়োগ সবকিছুতেই আসছে ব্যাপক পরিবর্তন। থানায় থাকবে স্বচ্ছ কাচের জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ, অভিযানের সময় পুলিশ পরবে বডি ক্যামেরা, গৃহ তল্লাশিতে বাধ্যতামূলক হবে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি। এমনকি মানবাধিকার লঙ্ঘনে র্যাব-পুলিশ যে-ই হোক, তদন্ত করবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। পাঁচ ধাপে বলপ্রয়োগের মতো জাতিসংঘ ঘরানার পদ্ধতিও যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশের কার্যপদ্ধতিতে। গত ২৩ জুলাই রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বার্তায় জানানো হয়, পাঁচটি সংস্কার কমিশনের ১২১টি আশু বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবের মধ্যে পুলিশ সংস্কার কমিশনের ১৩টি সুপারিশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে এ বৈঠক হয়।
থানায় থাকবে স্বচ্ছ কাচের জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ : সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী, এখন থেকে থানায় আটক কিংবা রিমান্ডে নেওয়া আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বচ্ছ কাচে ঘেরা আলাদা কক্ষ রাখার সুপারিশ কার্যকর হচ্ছে। থানার হাজত ও কোর্ট হাজতের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং মানবিক পরিবেশ নিশ্চিত করাও প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। নারী আসামিদের শালীন ও সুরক্ষিত পরিবেশে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে নারী পুলিশের উপস্থিতিতে।
অভিযানে ভিডিও রেকর্ড ও ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক : আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জন্য অভিযানের সময় জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম, ভিডিও রেকর্ডিং ডিভাইস ও নির্ধারিত পোশাক পরিধান বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। রাতের বেলায় (সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত) গৃহ তল্লাশির ক্ষেত্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি বা গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করবে কমিশন : আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের পূর্ণ ক্ষমতা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের হাতে ন্যস্ত করার সুপারিশ গৃহীত হয়েছে। একই সঙ্গে, এসব সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে ‘মানবাধিকার সেল’ স্থাপনেরও প্রস্তাব রয়েছে। আইজিপি কমপ্লেইন সেলের আদলে র্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীতেও এমন সেল গঠনের কথা বলা হয়েছে।
বেআইনি সমাবেশে বলপ্রয়োগের পাঁচধাপীয় নীতি : অপরিকল্পিত বলপ্রয়োগ রোধে ইউনাইটেড ন্যাশন্স স্ট্যান্ডার্ড পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট ম্যানুয়ালের আদলে বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীতে পাঁচধাপীয় বলপ্রয়োগ নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই নীতি পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে বাস্তবায়িত হচ্ছে, যা জনতা ছত্রভঙ্গ করতে আধুনিক ও পর্যায়ক্রমিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ দেবে। এতে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।
জবাবদিহির আওতায় র্যাবসহ সব সংস্থা : সভায় র্যাবের অতীত কার্যক্রম, বিশেষ করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো পুনর্মূল্যায়নের বিষয়েও আলোচনা হয়। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর বলপ্রয়োগে যেসব পুলিশ সদস্য জড়িত ছিলেন, তাদের শনাক্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হয়।