বাজার ‘সিন্ডিকেট’ মোকাবিলায় ১৯৫৬ সালে একটি আইন করেছিল পাকিস্তান সরকার। ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৫৬’ শীর্ষক ওই আইনটিতে বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য তালিকাভুক্ত ছিল- যেগুলোর বাণিজ্য, ব্যবসায়িক লাইসেন্স থেকে শুরু করে মূল্য নির্ধারণ- সব কিছুতেই হস্তক্ষেপ করতে পারে সরকার। এবার ৬৯ বছরের পুরোনো সেই আইনটিকে যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। উদ্দেশ্য- ‘নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ। পাশাপাশি পুরোনো সেই আইনটিতে নিত্যপণ্যের যে তালিকা রয়েছে, সেই তালিকাও হালনাগাদ করা হবে। নতুন তালিকা থেকে বাদ যেতে পারে তামাক ও তামাকজাত পণ্য। এ লক্ষ্যে একটি নতুন অধ্যাদেশ জারির উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সূত্র জানায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আলোচিত এই আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। গত বছর এ নিয়ে একটি খসড়াও তৈরি করা হয়। তবে জুলাই অভ্যুত্থানে লীগ সরকারের পতনের কারণে আইন সংশোধনীর কাজ থেমে যায়। ওই খসড়াটি সামনে রেখেই এখন অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ আকারে পুরোনো আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ বিষয়ে গত ২৬ আগস্ট একটি সভাও হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পুরোনো আইনটিতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে তামাক, সিগারেট, দিয়াশলাই (ম্যাচ)-এর মতো পণ্য তালিকাভুক্ত থাকলেও চাল, ডাল, আলুর মতো খাদ্যপণ্যের নাম তালিকায় নেই। ফলে ওই আইন দিয়ে বর্তমান সময়ের পণ্য ও বাজারব্যবস্থায় কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা যাচ্ছে না। এ কারণে আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিত্যপণ্যের তালিকাও হালনাগাদ হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুর রাজ্জাক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কমোডিটিজ অ্যাক্টের খসড়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এরপর এটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। সেখানে অনুমোদন হলে অধ্যাদেশ জারির বিষয়টি আসবে। জানা গেছে, প্রচলিত আইনের তালিকায় যেসব পণ্যের নাম রয়েছে, তার মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সরকার। আইনের আওতায় এসব পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার ক্ষমতাও রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। তালিকাভুক্ত পণ্যগুলোতে কোনো ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফার জন্য যদি কারসাজি করেন বা মজুত রেখে সংকট তৈরি করেন তবে জেল জরিমানাসহ আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে সরকার। তবে সমস্যা হচ্ছে- ছয় দশকেরও বেশি আগের ওই আইনটিতে যেসব পণ্যকে অত্যাবশ্যকীয় বা অতি প্রয়োজনীয় বলে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে- তার গ্রহণযোগ্যতা এখন আর নেই। এ কারণে আইনটি সংশোধন করে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের নতুন তালিকা করা হচ্ছে, যাতে সরকার সংশ্লিষ্ট পণ্যের সিন্ডিকেট প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। কর্মকর্তারা জানান, ছয় দশক আগে গুরুত্ব থাকলেও বর্তমানে অনেক পণ্যের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। ফলে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকা থেকে এগুলোকে বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তালিকায় কী ধরনের খাদ্যপণ্য অন্তর্ভুক্ত করা যাবে তার কোনো উল্লেখ নেই। এই খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে চাল, দুধ, ডিম, আলু রয়েছে কি-না সেটিও স্পষ্ট নয়। ফলে বাজারে চাল, ডিম, আলুর দাম বেড়ে গেলে বা কারসাজি অথবা মজুতদারি করে কেউ কৃত্রিমভাবে দাম বাড়ালে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নিতে পারছে না প্রশাসন।