শুঁটকি রপ্তানির জন্য বাংলাদেশের সব থেকে বড় বাজার হংকং, সিঙ্গাপুর, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ড। কিন্তু ভারত, পাকিস্তান ও মিয়ানমারের কাছে হারাতে বসেছে সেই বাজার। আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি হওয়া শুঁটকির গড় বাজার প্রায় ৬৪ লাখ ডলারের। রপ্তানি আয় অব্যাহত থাকলেও গত দুই বছরে আন্তর্জাতিক বাজারের ২২ দেশে শুঁটকি রপ্তানির মার্কেট হারিয়েছে বাংলাদেশ।
ব্যবসায়ীরা জানান, সম্প্রতি বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব শুঁটকিপল্লিগুলোতে পড়েছে। চাহিদার তুলনায় শুঁটকির উৎপাদন কমেছে এবং স্থানীয়ভাবে এ পণ্যটির দাম বেড়েছে অন্তত ১৫-২০ শতাংশ। এর জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানিতে ভাটা না পড়লেও নতুন কোনো বাজার তৈরি হয়নি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১ কোটি ২৮ লাখ ১৬ হাজার ৩৫৯ কোটি ডলারের শুঁটকি রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। সেই হিসাবে দুই বছরে গড়ে ৬৪ লাখ ৮ হাজার ডলারের শুঁটকি রপ্তানি হয়েছে। টাকার হিসাবে দুই বছরে প্রায় ১৫৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকার আয় করে বাংলাদেশ। একই সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে আরব আমিরাত, কানাডা, চায়না, ইন্দোনেশিয়াসহ ২২টি দেশ হাতছাড়া হয়।
চট্টগ্রামের শুঁটকিপট্টির ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আলতাফ ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, শুঁটকি আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনের কঠোর প্রয়োগ থাকায় সৌদি আরবের মার্কেটে শুঁটকি রপ্তানি একেবারেই কমে গেছে।
বাংলাদেশ ননটেকার ফরেজন ফিশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি মাহবুব রানা বলেন, কাস্টম ডিউটি বৃদ্ধি ও উৎপাদন কমায় শুঁটকির দাম বাড়ছে। এর সুযোগ নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার দখল করছে ভারত, পাকিস্তান ও মিয়ানমার। দেশে শুঁটকি উৎপাদন কম হওয়ায় মানভেদে সব ধরনের শুঁটকির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা। ফলে কম দামে একই মানের শুঁটি রপ্তানি করে আন্তর্জাতিক বাজার দখল করছে তারা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিদ্যা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন বলেন, রপ্তানিযোগ্য শুঁটকি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী কীটনাশকমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত প্রক্রিয়ায় উৎপাদন করা। কিন্তু আমরা কৌশলগতভাবেই পিছিয়ে রয়েছি। উৎপাদন বাড়াতে সারা বছর মাছ আহরণ করতে হবে। তাহলেই মানসম্পন্ন শুঁটকি রপ্তানি করা যাবে।