মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতি বছর সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির নগদ ভিত্তিক ভাতা নির্ধারণ করবে সরকার। এই বিধি চালু হলে উপকারভোগীরা সময়োপযোগী সুবিধা পাবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সম্প্রতি অর্থ বিভাগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে জানানো হয়, বর্তমানে দেশে মোট ৯৫টি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি চালু রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২১টি কর্মসূচি নগদ ভিত্তিক। সুবিধাগুলো নিয়মিত পর্যালোচনার জন্য বৈঠকে তিনটি প্রস্তাবিত সূচক আলোচনায় আসে। এগুলো হলো মূল্যস্ফীতি বোঝার ভোক্তা মূল্যসূচক, মাথাপিছু মোট জাতীয় আয় এবং ভোক্তা মূল্যসূচক ও মাথাপিছু মোট জাতীয় আয়ের গড় হার।
মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভোক্তা মূল্যসূচক ব্যবহার করা উচিত। অন্যদিকে মাথাপিছু মোট জাতীয় আয় সূচক ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভাতা বাড়ানো সম্ভব হবে বলে বৈঠকে একজন কর্মকর্তা প্রস্তাব করেন। উভয় সূচকের গড় ব্যবহার করলে মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দুটোই প্রতিফলিত হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। জানা গেছে, প্রতি বছর ছয়টি প্রধান নগদ ভিত্তিক কর্মসূচি পর্যালোচনার আওতায় আনা হতে পারে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী-পরিত্যক্তা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা এবং শিক্ষাবৃত্তি।
এ ছাড়া মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন’ এবং ‘মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি’ এবং দুর্যোগব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ‘চরম দরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচি’ও পর্যালোচনার অন্তর্ভুক্ত হবে। বৈঠকে বাজেট-১ শাখার অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি রাখা হবে। কমিটি প্রতি বছর অন্তত একবার ভাতার পরিমাণ পর্যালোচনা করবে বলে জানা গেছে।
চলতি বছর ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির জন্য সরকার ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। যা মোট বাজেটের প্রায় ১৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং জিডিপির ১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছর সরকার বয়স্ক ভাতার পরিমাণ ৬৫০ টাকা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীদের ভাতা ৬৫০ টাকা, প্রতিবন্ধীদের ভাতা ৯০০ টাকা এবং মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ৮৫০ টাকা নির্ধারণ করেছে।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, যেসব কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে, যাদের প্রয়োজন সহায়তা, সেগুলো নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা কী বলে? দুর্নীতি, অপচয় কমিয়ে সরাসরি টার্গেট গ্রুপের কাছে পৌঁছানো। ভাতার হার পর্যালোচনার আগে টার্গেট গ্রুপের কাছে পৌঁছানো নিশ্চিত করাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।