২০ এপ্রিল, ২০১৯ ১৬:১০

ফেরদৌস-নূর ইস্যুতে মমতাকে তোপ মোদির

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

ফেরদৌস-নূর ইস্যুতে মমতাকে তোপ মোদির

ভারতে চলমান লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীদের সমর্থনে নির্বাচনী প্রচারণায় বাংলাদেশের দুই অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ ও গাজী আবদুন নূর-এর অংশ নেওয়ার ঘটনায় যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে তা এখনও অব্যাহত। এ ঘটনায় এখনও সরগরম পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি। 

এই ইস্যুতে বিজেপি, কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলো আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে তোপের মুখে রেখেছেন। আর এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে এই ইস্যুতে মমতাকে প্রবল ভাবে আক্রমণ করে চলেছেন। আর এতেই পরিষ্কার চলমান নির্বাচনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে এই ইস্যুকেই প্রধান হাতিয়ার করতে চাইছে বিজেপি। 

শনিবার পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুরে নির্বাচনী প্রচারণায় এসে মোদির অভিযোগ তুষ্টিকরণের রাজনীতির কারণেই মমতা বিদেশ থেকে লোক এনে প্রচারণা করছেন।

অন্যদিকে এদিনই উত্তর চব্বিশ পরগনায় একটি নির্বাচনী প্রচারণায় যোগ দেওয়ার ফাঁকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু জানান, বাংলাদেশ আমাদের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র। কিন্তু ভারতে ভ্রমণের ক্ষেত্রে দেশের ভিসা আইনকে সম্মান জানাতেই হবে।

এদিন সকালের দিকে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বুনিয়াদপুরে এক নির্বাচনী জনসভা থেকে মোদি বলেন, ‘এখানে তোষণের রাজনীতির জন্য অন্য দেশের মানুষদের ডেকে নিয়ে এসে নির্বাচনী প্রচারণার কাজে লাগানো হচ্ছে। এটা খুবই লজ্জাজনক ঘটনা।’ তার প্রশ্ন ‘ভারতে কখনও কোনোদিন এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে? যে বিশ্বের অন্য কোনো দেশের নাগরিক এনে ভারতের নির্বাচনে প্রচারণা করতে হয়েছে?’ নিজেদের স্বার্থের জন্য, ভোট ব্যাঙ্কের জন্য, তোষণের রাজনীতির জন্য মমতা যতটা নিচে নামার দরকার, উনি নামবেন। এই ধরনের মডেল দেশের জন্য তো নয়ই, এমনকি পশ্চিমবঙ্গের জন্যও কাম্য নয়।’ 

মোদি আরও বলেন, ‘দেশের জন্য এমন উন্নয়নের মডেল চাই যেখানে সবার সুরক্ষা ও সম্মান মেলে, এমন অগ্রগতির মডেল দরকার যেখানে দেশের নাম উজ্জ্বল করবে। এমন মডেল প্রয়োজন সেখানে সন্ত্রাসবাদীরা ভয় পাবে।’  

উল্লেখ্য, গত ১৪ এপ্রিল-রাজ্যটির উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়ালের সমর্থনে ইসলামপুরে একটি প্রচারণায় অংশ নেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ। একটি হুডখোলা গাড়িতে করে টালিগঞ্জের অভিনেতা অঙ্কুশ ও অভিনেত্রী পায়েল সরকারের সাথে ‘রোড শো’তে দেখা যায় ফেরদৌসকে। রোড শো’এর পর একটি জনসভায় অংশ নিতে দেখা যায় ফেরদৌসকে। 

অন্যদিকে ‘দমদম’ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সৌগত রায়ের হয়ে প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা যায় গাজী আবদুন নূরকে। ওই প্রচারণায় টিভি ধারাবাহিক ‘রানী রাসমণি’ খ্যাত অভিনেতা নূরের সাথেই ছিলেন রাজ্যটির সাবেক মন্ত্রী ও তৃণমূল নেতা মদন মিত্র। 

দুইটি ঘটনাতেই ফেরদৌস ও নূরের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জমা পড়ে। অভিযোগের প্রেক্ষিতেই ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেরদৌসকে কালো তালিকাভুক্ত ঘোষণা করে তার বিজনেস ভিসা বাতিল করে। অন্যদিকে নূরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও তিনি ভারতে থেকে যান। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে তাকেও দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়।  

এদিকে ফেরদৌস ও নূরকে ভারত ছাড়ার নির্দেশ নিয়ে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু জানান, ‘অবশ্যই, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু নিয়ম-নীতি রয়েছে এবং আমাদের সেটা অনুসরণ করতে হবে। এখানে কোনো ভুল নেই।’ 

শনিবার পশ্চিমবঙ্গের ব্যারাকপুরে একটি নির্বাচনী প্রচারণায় যোগ দেওয়ার ফাঁকে গণমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে রিজিজু জানান, ‘যেসব বিদেশি নাগরিককে ভারতের ভিসা দেওয়া হয়, তাদেরকে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়া বা অন্য কোনো অবৈধ কাজকর্মের জন্য দেওয়া হয় না। তাই সেখানে কিছু নিয়ম-নীতি রয়েছে এবং আমাদের সেটা মেনে চলতে হবে।’ 

বিষয়টি নিয়ে সরকারি তরফে বাংলাদেশ সরকারের সাথে কথা হয়েছে কি না সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওই বিষয়টি আলাদা, সেটা কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের নিয়ম অনুসারে পদক্ষেপ নেবে। আমাদের সরকার এই বিষয়ে খুব পরিষ্কার। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের নাগরিক যদি ভাল কাজে এদেশে আসতে চায়, আমরা সবাইকে স্বাগত জানাবো। কিন্তু যারা ভারতে রাজনৈতিক উদ্দেশে আসছে বা বেআইনি কর্মকাণ্ডের জন্য আসছে-তাদেরকে আমরা কোনো ভাবেই উৎসাহিত করবো না। বিদেশি নাগরিকদের ভারতে এসে নির্বাচনে প্রচারণায় অংশ নেওয়া কিংবা ট্যুরিস্ট, বিজনেস ভিসা নিয়ে অন্য কাজে লিপ্ত হবে তা গ্রহণযোগ্য নয়।’ 

বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন ভারতের এই পদক্ষেপকে ‘বাড়াবাড়ি’ বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে সে ব্যাপারে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিজিজু জানান, ‘এটা আপনাদের বুঝতে হবে যে, যখন আপনি নির্দিষ্ট শর্তের ভিত্তিতে ভিসার জন্য আবেদন করবেন, আপনাকে সেগুলো মানতে হবে। ভারতের আইন-কানুনকে সম্মান জানাতে হবে। তাই নয় কি?”

দুই বাংলাদেশি অভিনেতাকে দিয়ে প্রচারণার বিষয়টি নিয়ে মমতা ব্যানার্জি একটি শব্দও খরচ না করা নিয়ে কিরেন রিজিজু জানান, ‘সে যাই হোক না কেন, ভিসা নেওয়ার সময় আপনাকে ভ্রমণের উদ্দেশ্য জানাতে হয়। বাংলাদেশ ভীষণ ভাবে ভারতের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র। বাংলাদেশ সরকার ও সে দেশের মানুষের প্রতি আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার আছে। কিন্তু কেউ যদি ভিসা আইনের অপব্যাবহার করেন-সেখানে কাউকে উৎসাহিত করা উচিত নয়।’  

এদিন বুনিয়াদপুরের সভা থেকে মমতাকে ফের একবার ‘স্পিড ব্রেকার দিদি’ বলে কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দিদি বুঝে যাবেন যে সাধারণ মানুষের রুপি লুট করা, ওদের উপর অত্যাচারের ফল কি হতে পারে।’ 

জনসভায় উপস্থিত সকলকে উদ্দেশে করে মোদির অভিমত, ‘মমতা দিদির ওপর অনেক ভরসা করেছেন কিন্তু মা-মাটি-মানুষের নামে শুধু প্রতারণা করেছে। এটা কেবল আপনাদের ভুল নয়, আমিও একই ভুল করেছি। আমি যখন টিভির পর্দায় দেখতাম বা ওর সাথে সাক্ষাৎ করতাম-তখন মনে হতো তিনি (মমতা) বোধহয় খুব ভাল মানুষ। উনি খুব কষ্ট করেন, বাংলার ভাল চায়। বামেদের উৎখাত করে তিনি বাংলার মানুষের মুক্তি দিতে চায়-আমিও এটা ভেবেছিলাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ওনার কাজকর্ম দেখে আমার মাথা ঘরে গেছে। তাই আমার মতো মানুষের যেখানে দিদিকে চিনতে এত বড় ভুল হয়ে গেছে, সেখানে বাংলার মানুষের তো ভুল হওয়া স্বাভাবিক।’ 


বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর