আগামী ১৯ মে ভারতে সাত পর্বের লোকসভা নির্বাচনের শেষ ধাপের ভোটগ্রহণ। ভোট নেওয়া হবে দেশটির আট রাজ্যের ৫৯ টি আসনে। এর মধ্যে আছে পশ্চিমবঙ্গের ৯ টি আসন-দমদম, বারাসত, বসিরহাট, জয়নগর, মথুরাপুর, ডায়মন্ডহারবার, যাদবপুর, কলকাতা দক্ষিণ ও কলকাতা উত্তর।
দেশজুড়েই প্রচারণার সময় সীমা ছিল শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা অবনতির কারণ দেখিয়ে নজিরবিহীনভাবে কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রচারের সময় ২৪ ঘণ্টা কমিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বুধবার রাতেই দিল্লিতে ইসি-এর তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় বৃহস্পতিবার রাত ১০ টার পর কোনো ভাবেই ভোটের প্রচারণা করা যাবে না।
কমিশনের এ সিদ্ধান্ত স্বাভাবিক ভাবেই অস্বস্তিতে পড়ে রাজনৈতিক দলগুলো। বদল ঘটাতে হয় তাদের নির্ধারিত কর্মসূচিতে। কিন্তু ভোট বড় বালাই। তাই সময় নষ্ট না করেই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ময়দানে নেমে পড়ে ডান-বাম সব পক্ষ। আর প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দুতে বিরোধীদের নিশানা ছিল কমিশনের নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ১৯ মে ভোট হতে যাওয়া কেন্দ্রগুলোতে নেমে পড়েন প্রতিটি দলের প্রার্থীরা।
এদিন সকালে দমদম কেন্দ্রের সিপিআইএম মনোনীত প্রার্থী নেপালদেব ভট্টাচার্যের সমর্থনে বরানগর থেকে এক বর্ণাঢ্য পদযাত্রা বের হয়। প্রার্থী ছাড়াও তাতে অংশ নেন দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য্য। আড়িয়াদহে প্রচারণায় বের হন দমদমের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সৌগত রায়। সিঁথিতে একটি আবাস এলাকায় বিজেপিকে ভোট দেওয়ার আর্জি জানান দমদম কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শমিক ভট্টাচার্য।
যাদবপুরে এক ব্যক্তিকে বিদ্যাসাগর সাজিয়ে প্রচারণায় অংশ নেন বিজেপি প্রার্থী অনুপম হাজরা। বসিরহাটের বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণায় অংশ নেন তৃণমূল প্রার্থী নুসরত জাহান ও বিজেপির প্রার্থী সায়ন্তন বসু।
তবে সব প্রচারণাকে ছাপিয়ে শীর্ষে আসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বাগযুদ্ধ। শেষবেলায় রাজ্যে চারটি প্রচারণায় অংশ নেন তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যনার্জি। এর মধ্যে মথুরাপুর ও ডায়মন্ডহারবার-এ দুইটি জনসভা ছাড়াও ছিল জোকা ও সুকান্ত সেতু এলাকায় দুইটি পদযাত্রা।
অন্যদিকে দুইটি জনসভায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
দুইটি জনসভা থেকেই প্রচারণার সময় একদিন আগে শেষ করা নিয়ে কমিশন ও কেন্দ্রকে তোপ দাগেন মমতা।
মথুরাপুরের সভা থেকে তিনি বলেন, ‘আমার এই জনসভাটা শুক্রবার ছিল কিন্তু বুধবার রাতে যখন জানতে পারলাম যে ওটা করা যাবে না তখনই ঠিক করি যে আজকে করা হবে। নরেন্দ্র মোদির পর যাতে আমরা কোনো বৈঠক করতে না পারি, সেই কারণেই বিজেপি কমিশনের কাছে অভিযোগ জানায়।’
নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মমতার অভিযোগ, ‘নির্বাচন কমিশন হল বিজেপির আরেক ভাই। আগে ইসি নিরপেক্ষ ভূমিকা নিতো কিন্তু এখন ভারতের সব মানুষই বলছে কমিশনটা বিজেপির কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। আমার দুঃখ হয় কিন্তু কিছু করার নেই। এই কথা বলার জন্য তারা যদি আমায় কারাগারে পাঠায় তবে আমি যেতে রাজি আছি।’ মমতার অভিমত আমার প্রচারণা বন্ধ করে কাঁচকলা করবেন।
তৃণমূলকে নিশানা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানান, ‘তৃণমূলের দাদাগিরি আমি পরশু রাতেই দেখেছি। পরশু কলকাতায় অমিত শাহের র্যালিতে তৃণমূলের গুন্ডারা ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে ফেলেছে। এই কাজ করার জন্য অভিযুক্তদের কঠোরতম শাস্তি দেওয়া উচিত।
আমি আরও বলবো বিদ্যাসাগারের দূরদৃষ্টিকে সমর্পিত আমাদের সরকার ওই জায়গাতেই পঞ্চ ধাতুর মহা মূর্তি স্থাপন করবে আর তৃণমূলের গুন্ডাদের জবাব দেবে।’
মোদির সকালের জবাবের পর দুপুরে তার পাল্টা দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, ‘মিথ্যাবাদী প্রধানমন্ত্রীর লজ্জাও করে না। উত্তরপ্রদেশের একটা সভা থেকে মোদি বাবু বলেছে আমি একটা বানিয়ে দেবো। তোর টা থোড়াই নেবো আয়! বিদ্যাসাগরের মূর্তি বানানোর জন্য বাংলার রুপি আছে।’
তার প্রশ্ন ২০০ বছরের আগের হেরিটেজ ফিরিয়ে দিতে পারবে? জীবন গেলে জীবন ফিরিয়ে দিতে পারবে? ঐতিহ্য ফিরিয়ে দিতে পারবে? উনি সব ভেঙে দিয়ে গেছেন-আমাদের কাছে সব ভিডিও কপি রয়েছে। আর তুমি বলছ তৃণমূল করেছে? লজ্জা করে না? এই প্রধানমন্ত্রীর কান ধরে ওঠ-বস করা উচিত। একবার নয়, মিথ্যা কথা বলার জন্য লক্ষবার তা করা উচিত।’
মমতার হয় এটার প্রমাণ করো, না হয় তোমায় কিন্তু আমরা জেলে পাঠাবো। তার কারণ আমাদের কাছে প্রমাণ আছে।’
মমতাকে ফের একবার স্পিড ব্রেকার দিদির সাথে তুলনা টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজ্যের মানুষের প্রতি তার খেয়াল নেই। ওনার খেয়াল গদির দিকে। উনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে স্বীকার করছেন না, অথচ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেন। উনি রাজ্যের ছেলে-মেয়েদের কারাগারে প্রেরণ করেন অথচ অনুপ্রবেশকারী, দুর্বত্তদের ছেড়ে রেখেছেন।’
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন