শিরোনাম
বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ব্রেক্সিট কার্যকর হলে বেশি সুবিধা পাবে বাংলাদেশ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ব্রেক্সিট কার্যকর হলে বেশি

সুবিধা পাবে বাংলাদেশ

যুক্তরাজ্যের ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে যাওয়া কার্যকর হলে আরও বেশি বাণিজ্য সুবিধা পেতে পারে বাংলাদেশ। দেশটির কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশের হাইকমিশনকে বিষয়টি অবহিত করে এ বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব চেয়েছে। এখন বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের কাছে কীভাবে আরও বেশি সুবিধা পেতে পারে সে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বিষয়টি নিয়ে গত সপ্তাহে একটি বৈঠক হয়েছে মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলে। ওই বৈঠকে ‘ইবিএ-প্লাস’ শীর্ষক একটি সমন্বিত প্রস্তাব তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে কীভাবে আরও বেশি বাণিজ্য সুবিধা আদায় করা যায় সে বিষয়গুলো উল্লেখ থাকবে ওই প্রস্তাবে। বিশেষ করে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে রুলস অব অরিজিনের শর্ত আরও সহজ ও শিথিল করা, বাণিজ্যে সক্ষমতা বাড়াতে কারিগরি সহায়তা চাওয়া, সবজি ও হিমায়িত খাদ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে স্যানিটারি ও ফাইটো স্যানিটারিসহ যেসব কমপ্লায়েন্স ইস্যু রয়েছে সেগুলোতে সহায়তা চাওয়ার বিষয়গুলো যুক্ত হবে ‘ইবিএ-প্লাস’ প্রস্তাবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ইবিএ-প্লাস’ বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে ট্যারিফ কমিশন। এ ছাড়া ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর কাছেও এ বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে ইইউতে ইবিএ (এভরিথিং বাট আর্মস) পদ্ধতি অর্থাৎ অস্ত্র ব্যতীত সব পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলে এই বাণিজ্য সুবিধার কী হবে সেটি নিয়ে উদ্বেগ ছিল বাংলাদেশের। যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানির পরেই যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে বেশি পণ্য বাংলাদেশ রপ্তানি করে আসছে। সঙ্গত কারণেই ইউরোপের এই দেশটি বাংলাদেশের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানি বাজার হচ্ছে যুক্তরাজ্য। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা মোট রপ্তানির ১১ দশমিক ২ শতাংশ। এই বিশাল পরিমাণ রপ্তানির কারণ হচ্ছে ইবিএ-এর আওতায় শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা। এ প্রেক্ষাপটে ব্রেক্সিটের পরও যাতে যুক্তরাজ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা অব্যাহত থাকে সে বিষয়ে লন্ডনের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে ঢাকা। সম্প্রতি লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন এ নিয়ে দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেয়। ওই আলোচনায় যুক্তরাজ্যের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা ব্রেক্সিটের পরও স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে ইবিএ সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছেন। এমনকি বিদ্যমান সুবিধার চেয়ে আরও বেশি সুবিধা দেওয়ার বিষয়টিও যুক্তরাজ্য সরকারের বিবেচনায় রয়েছে বলে হাইকমিশনকে জানানো হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবক চেয়েছে তারা। এ পরিপ্রেক্ষিতে লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন আরও সুবিধা পাওয়ার লক্ষ্যে ‘ইবিএ-প্লাস’ প্রস্তাব পাঠানোর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায়।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাজ্য ইউরোপিয়ন ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে  গেলেও বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যে প্রভাব পড়বে না এমন আশ্বাস আগেই দিয়েছিলেন দেশটির নেতারা। গত জুলাইয়ে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে আঙ্কটাড কনফারেন্সে সাইডলাইন বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও যুক্তরাজ্যের ডেলিগেশন প্রধান মি.  মেথিউস। ওই বৈঠকে মেথিউস বলেন, ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। বিগত দিনের         মতো বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য স্বাভাবিক থাকবে। ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের      বেরিয়ে  আসার বিষয়টি চূড়ান্ত অনুমোদনের পরবর্তী দুই বছর সব বিষয়ে আগের মতোই সুবিধা অব্যাহত থাকবে।

সর্বশেষ খবর