অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত স্থিতিভিত্তিক শ্রেণি ঋণ বিবরণী অনুযায়ী সরকারি মালিকানাধীন ৬টি ও বিশেষায়িত দুটি ব্যাংকে খেলাপী ঋণে পরিমান ২৮ হাজার ৫৪০ কোটি ৬৭ লাখ। এসব ব্যাংকে মোট ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৩৪ কোটি ৩ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরির ঘটনায় সরকার গঠিক তদন্ত কমিটির পুর্নাঙ্গ প্রতিবেদন কয়েকদিনের মধ্যেই প্রকাশ করা হবে। এব্যপারে তদন্ত কমিটি করে দিয়েছিলাম তার রিপোর্ট কয়েকদিনের মধ্যে প্রকাশ করা হবে।এ ব্যপারে চলতি অধিবেশনেই আমি বক্তব্য দেব।
স্পিকার ড. শিরিনি শারমিন অধিবেশনের সভাপতিত্বে সংসদের একাদশ অধিবেশনে বৃহস্পতিবার এম এ আউয়ালের (লক্ষ্মীপুর-১) লিখিত ও সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী সংসদে এ তথ্য জানান। অর্থমন্ত্রী বলেন, চুরি বন্ধের জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে সরকার কড়া নজর রাখছে।
লিখিত প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, ঋণ খেলাপী ব্যাংকগুলো মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের মোট ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ ২১ হাজার ৭৫৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপী ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৫৮৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড এর মোট ঋণ ও অগ্রিম এর পরিমাণ ১ লাখ ৪৯৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপী ঋণের পরিমাণ ৬৩০ কোটি ১২ লাখ টাকা। বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের মোট ঋণ ও অগ্রিমের পরিমান ১২ হাজার ৭০১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপী ঋণের পরিমান ৬ হাজার ৩০০ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
এছাড়া জনতা ব্যাংক লিমিটেড এর মোট ঋণের পরিমাণ ৩২ হাজার ৬১৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপী ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ৮৩০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। রূপালী ব্যাংক লিমিটেড এর মোট ঋণের পরিমাণ ১৪ হাজার ৪৭৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপী ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৫৪৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এর মোট ঋণ ও অগ্রিম এর পরিমাণ ২৯ হাজার ৪০৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ঋণ খেলাপীর পরিমান ৭ হাজার ৯৭৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। অর্থমন্ত্রী আরো জানান, বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মোট ঋণের পরিমাণ ১৬ হাজার ৯৪১ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপী ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৮৬১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মোট ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৪৩৬ কোটি ৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপী ঋণের পরিমাণ ৮০১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
ব্যাংকিং খাতে জাল-জালিয়াতি দায় ব্যাংকের
সরকার দলীয় সদস্য গোলাম রাব্বানীর লিখিত প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ব্যাংকিং খাতে জাল-জালিয়াতি বা অনিয়ম সনাক্তকরণ ও প্রতিরোধের প্রাথমিক দায়িত্ব সংশিষ্ট ব্যাংকগুলোর উপর বর্তায়। তবে ব্যাংকের জাল-জালিয়াতি রোধে এবং আর্থিক শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রচলিত পরিদর্শন কার্যক্রমের পরিবর্তে ঝুঁকি ভিত্তিক পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনার পদক্ষেপ গ্রহীত হয়েছে। এতে করে ব্যাংকগুলোর যে কোন ঝুঁকিপূর্ণ কার্যক্রমকে আগেভাগেই সনাক্তকরণপূর্বক এর প্রতিকারের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে যার ফলে ব্যাংকগুলোতে অনিয়ম/জাল-জালিয়াতির সুযোগ কমে আসবে।
বহুজাতিক কোম্পানি কর ফাঁকি দিচ্ছে
সরকারদলীয় সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর অপর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, শুধু বাংলাদেশ নয় বহুজাতিক কোম্পানগিুলোর মাঝে কর ফাঁকির প্রবণতা একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। আমাদের দেশে ঠিক কত হারে এ ধরনের কোম্পানিগুলো কর ফাঁকি দিয়ে থাকে তা নিরূপণ করা দুরূহ। এজন্য বিদ্যমান চুক্তিসমূহ পরিমার্জনের লক্ষ্যে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড পুরনো দ্বৈতকর পরিহার চুক্তিসমূহ পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। একইসঙ্গে এ সংক্রান্ত আইন ও বিধি-বিধান হালনাগাদের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ২০১২ সালে ট্রান্সফার প্রাইসিং আইন আয়কর আইনে সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়া আইনের অপব্যবহার বন্ধ ও আন্তসীমান্ত কর ফাঁকি রোধের বিষয়টি অধিকতর গুরুপ্ত সহকারে বিবেচনা করে চলতি বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে একটি স্বতন্ত্র ট্রান্সফার প্রাইসিং ইউনিট গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
৫ বছের ১০ কোটি টাকার মোবাইল জব্দ
বজলুল হক হারুনের (ঝালকাঠি-১) এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন,গত ৫ বছরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় ১০ কোটি টাকা দামের ৮ হাজার ৪২৮টি অবৈধ মোবাইল সেট জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এসব চালানগুলোতে ৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা দামের ৮ হাজার ৪২৮টি অবৈধ মোবাইল সেট ছিল। এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২ কোটি ৪ লাখ টাকা মূল্যের ১ হাজার ২০৯টি এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩ কোটি টাকা মূল্যের ৮ হাজার ৪২৮টি অবৈধ মোবাইল সেট জব্দ করা হয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৪ কোটি ১ লাখ টাকা দামের ৪ হাজার ৩৭৫টি অবৈধ মোবাইল সেট জব্দ করা হয়। ২০১১-১২ অর্থবছরে ৮ লাখ টাকা মূল্যের ১ হাজার ৬২৪টি, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৭১ লাখ টাকার ৯৫১টি সেট জব্দ করা হয়েছে।
তিন ব্যাংক মুনাফা করেছে ১৫০ কোটি
সরকারি দলের সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর লিখিত প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সংসদে জানিয়েছেন ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ব্যাংক সোনালী, রূপালী ও অগ্রণী প্রায় ১৫০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। এরমধ্যে সোনালী ব্যাংক ৫৮ কোটি ৬৫ লাখ, রূপালী ২৩ কোটি ৫০ লাখ ও অগ্রণী ব্যাংক ৬৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা মুনাফা করেছে।
বিডি-প্রতিদিন/ ২১ জুলাই, ২০১৬/ আফরোজ