বনানীতে দুই তরুণী ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী রহমত আলীকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নারী সহায়তা ও তদন্ত বিভাগের পরিদর্শক ইসমত আরা অ্যানি ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে প্রত্যেককে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মহানগর হাকিম লস্কার সোহেল রানা বিল্লালকে চার দিন ও রহমতকে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রিমান্ড মঞ্জুর শেষে গতকাল সন্ধ্যায় বিল্লাল ও রহমতকে আদালত থেকে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নেওয়া হয়। ওই সময় সাফাত ও সাদমান ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা কার্যালয়ের একটি কক্ষে ছিল। বিল্লাল ও রহমতকে দেখে তারা চমকে ওঠে। সেখানে তাদের মধ্যে কিছু কথাও হয়েছে। এরপর তাদের আলাদা কক্ষে নেওয়া হয়। চারজন যখন মুখোমুখি অবস্থায় ছিল তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা। রাতে (মঙ্গলবার) আরেক দফা চার আসামিকে মুখোমুখি করার কথা ছিল।
গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, সাফাত ও সাদমানকে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে বিল্লাল র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছে। সে দাবি করেছে, ধর্ষণের ঘটনায় সাফাতরা সবাই জড়িত।
অন্যদিকে, সংবাদ সম্মেলন করলেও অনেক প্রশ্নের উত্তর দেয়নি দ্য রেইনট্রি কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া রাজধানীসহ সারা দেশে ধর্ষিতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শককে চিঠি পাঠাবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
মামলার নয় দিন পর সোমবার রাতে ঢাকার নবাবপুর রোডের একটি হোটেল থেকে বিল্লালকে এবং গুলশান থেকে রহমতকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়। এর পাঁচ দিন আগে সাফাতের সঙ্গে মামলার আসামি সাদমান শাকিফকে সিলেট থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সাদমান পিকাসো রেস্তোরাঁ ভবনের মালিক ও রেগনাম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ হোসেন জনির ছেলে। মামলার পাঁচ আসামির মধ্যে নাঈম আশরাফ ওরফে হাসান মোহাম্মদ হালিম এখনো পলাতক।
অনেক প্রশ্নেরই উত্তর দেয়নি রেইনট্রি কর্তৃপক্ষ : আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করলেও সাংবাদিকদের বেশিরভাগ প্রশ্নেরই কোনো উত্তর দেয়নি দ্য রেইনট্রি হোটেল কর্তৃপক্ষ। গতকাল বেলা ১১টায় দ্য রেইনট্রি হোটেলে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করার পর সাংবাদিকদের হাতে প্রেস বিজ্ঞপ্তি ধরিয়ে দিয়ে হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদনান হারুন শুধু বলেন, ‘আমরা আমাদের বক্তব্য প্রেস রিলিজ আকারে দিয়েছি, এর বাইরে আর কোনো বক্তব্য নেই। ’ উপস্থিত সাংবাদিকদের অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তরে রেইনট্রির প্রতিনিধিগণ বিষয়টি তদন্তাধীন বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন কেন এমন প্রশ্নে আদনান হারুন বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতেই এ সংবাদ সম্মেলন। আপনাদের জন্য রিফ্রেশমেন্টের ব্যবস্থা রয়েছে’ বলেই আদনান হারুন আসন থেকে উঠে যান। একই সঙ্গে উঠে যান হোটেলটির মহাব্যবস্থাপক ফ্রাঙ্ক ফরগেট, হোটেলের ইন্টারনাল অপারেশন এক্সিকিউটিভ ফারজান আরা রিমি এবং এই গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক রাজা গোলাম মোস্তফা। গত ২৮ মার্চ দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় হোটেলটির নাম আলোচনায় উঠে আসে। শুরু থেকেই এ হোটেলের আচরণ ছিল রহস্যজনক। গত ৯ এপ্রিল হোটেলের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলেও তার আগেই হোটেলে এ ঘটনা ঘটে।
লিখিত বক্তব্যে আদনান হারুন বলেন, শাফাত আহমেদের নামেই হোটেলের ৭০০ ও ৭০১ নম্বর সুুইট ভাড়া নেওয়া হয়। সেদিন রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত হোটেলের মহাব্যবস্থাপক হোটেলে অবস্থান করলেও তিনি অস্বাভাবিক কিছু দেখেননি। ধর্ষণ ঘটনার প্রধান আসামি শাফাত আহমেদের সঙ্গে হোটেলের পরিচালক মাহির হারুনের বন্ধুত্বের বিষয়টিও সঠিক নয়। তিনি বলেন, হোটেলের নিয়ম অনুযায়ী বিশেষ দিনকে উপলক্ষ করে তাদের হোটেলের তরফ থেকে কেক ও ফুলের ব্যবস্থা করা হয়। শাফাত আহমেদের জন্মদিনেও তাই করা হয়েছে। সেদিন জন্মদিনের অনুষ্ঠান হোটেলের ছাদে কত সময় ধরে চলছিল এবং হোটেল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে সেখানে যাওয়া হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে আদনান হারুন চুপ থাকেন। কত সময় অনুষ্ঠান চলেছে আবার প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন এ বিষয়ে তারা কোনো কথা বলবেন না। হোটেলে কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিনা সেটি আদালতে প্রমাণিত হবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেটি তদন্ত করছে, এটি প্রক্রিয়াধীন।
আইজিপিকে চিঠি দিবেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন : আগামীকাল দুই শিক্ষার্থীসহ সাম্প্রতিক সময়ে যেসব নারী শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে তাদের নিরাপত্তার নিশ্চিতের সুপারিশ করে পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর চিঠি পাঠাবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান। গত রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, বনানীর দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ধর্ষণের শিকার নারী-শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য পুলিশ প্রধান মহোদয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। শুনেছি এক ছাত্রীর সাক্ষাৎকার ভিডিও করে তা ইউটিউবে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এটা সত্যিই অনেক দুঃখজনক। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর উচিত হবে এ বিষয়েও যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া।
বিডি প্রতিদিন/১৭ মে ২০১৭/হিমেল