প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে দেয়া মতামতের কারণে দেশের ২ কোটি হিন্দু ধর্মাবলম্বী জাতির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছে বলে দাবি করেছে হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট।
গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির ভাইস চেয়ারম্যান বিচারপতি গৌর গোপাল সাহা লিখিত বক্তব্যে এ দাবি করেন। শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় তার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ট্রাস্টের ট্রাস্টি রিপন রায় লিপু।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, ‘দুই কোটি হিন্দু জনগোষ্ঠী আজ অকারণে ব্যক্তি বিশেষের অবিমৃশ্যকারিতার জন্য জাতির কাঠগড়ায় অভিযুক্ত। অথচ এ বিভ্রান্তির জন্য তাদের দায়-দায়িত্ব নেই। এ দেশের হিন্দু জনগোষ্ঠী চিরদিনই মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনায় বিশ্বাসী এবং বাঙালি জাতিসত্তার প্রতি শ্রদ্ধাবান। হিন্দু নামধারী ব্যক্তি বিশেষের অপকর্মের দায়-দায়িত্ব তারা কোনোভাবেই বহন করে না।’
আরও বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতির অপ্রাসঙ্গিক, বিচারবহির্ভূত কিছু অবাঞ্ছিত মন্তব্যকে কেন্দ্র করে দেশে বর্তমানে উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছে। স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মালিক এ দেশের জনগণ এবং বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র জনগণের স্বার্থে এবং জনগণ কর্তৃক রচিত এবং গৃহীত। এ সংবিধান নিয়ে ব্যক্তিবিশেষের উচ্চাভিলাষ ও দুরভিসন্ধি কোনোটাই এ দেশের জনগণ গ্রহণ করে না।
এরপর বলা হয়, সাম্প্রতিককালে বিচারপতি সিনহা সংসদকে অযোগ্য, অকার্যকর এবং সাংসদদের অযোগ্য বলে যে মন্তব্য করেছেন তা এখতিয়ারবহির্ভূত ক্ষমতার অপব্যবহার। বাংলাদেশের শাসনতন্ত্রে নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের এখতিয়ার সুনির্দিষ্ট করা আছে। এতে বিভ্রান্তির সুযোগ নেই। অকারণে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি জাতীয় স্বার্থ ও সম্মানের পরিপন্থী।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, একজন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ হয়েও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দাক্ষিণ্যে বিশেষ সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত হয়ে বিচারপতি এস কে সিনহা যে সুযোগ পেয়েছিলেন, তিনি তার সম্মান রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিচারপতি গৌর গোপাল সাহা বলেন, ‘অবজারবেশনের পর হিন্দুদের বেইমান ভাবা হচ্ছে। স্বার্থপর ভাবা হচ্ছে। আসলে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা হিন্দুদের স্বার্থপরিপন্থী কাজ করেছে। এর সঙ্গে অন্যদের সম্পৃক্ততা নেই।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এস কে সিনহা শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু প্রধান বিচারপতি সেই খবর প্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করায় তা সত্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি স্বপন কুমার রায়, চন্দন রায়, অ্যাডভোকেট উজ্জ্বল প্রসাদ কানু, নির্মল পাল, শ্যামল ভট্টাচার্য ও সুব্রত পাল প্রমুখ।
বিডি-প্রতিদিন/২৬ আগস্ট, ২০১৭/মাহবুব