চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যার বিচার ৩০ বছরেও শেষ না হওয়ায় আক্ষেপ ও দুঃখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রামের ১৭টি প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় তিনি এ আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা ১৭ প্রকল্পের মধ্যে ছিল ‘১৯৮৮ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নিহত ২৪ জন নেতাকর্মীসহ গণতন্ত্রকামী বীর শহীদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ’ ছিল একটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই মামলা এখনো শেষ হল না, সেটা আমার দুঃখ।’
এ সময় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারির সেই ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী আবারও বিষয়টির অবতারণা করে বলেন, ‘আপনি সেদিনের স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন। সেদিন সরাসরি গুলি ও লাঠিচার্জ করা হয়েছিল। এখনো মামলাটি শেষ হয়নি। মামলাটি যিনি করেছিলেন তিনিও এখন বেঁচে নেই। আপনি একজন আইনজীবী, আপনারা উদ্যোগ নেন মামলাটি যেন দ্রুত শেষ হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে পুলিশ কর্মকর্তা সেদিন গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, বরং খালেদা জিয়ার সময়ে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল।’
প্রসঙ্গত, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের শেষ দিকে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বন্দরনগরীর লালদিঘী ময়দানে এক জনসভায় যাওয়ার পথে তার গাড়িবহরে নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। ওই ঘটনায় সেদিন ২৪ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে দু'জনের পরিবারের সদস্য মনজু ও অঞ্জন উপস্থিত ছিলেন ভিডিও কনফারেন্সে। ওই হত্যাকাণ্ডের চার বছর পর ১৯৯২ সালে আইনজীবী মো. শহীদুল হুদা একটি মামলা করলেও বিএনপির আমলে তদন্ত আর গতি পায়নি। পরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৯৯৮ সালে দ্বিতীয় দফায় দেয়া অভিযোগপত্রে ৮ জনকে আসামি করা হয়। তাতে প্রধান আসামি হন ঘটনার সময় চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদা। গত তিন দশকে মামলার গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন সাক্ষী, দুই আসামি রকিবুল হুদা ও পুলিশ কনস্টেবল বশির উদ্দিন, মামলার বাদী আইনজীবী মো. শহীদুল হুদা এবং সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি আব্দুল কাদের মারা গেছেন। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত গত ২০ বছরে এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ৪৬ জন। এর মধ্যে ২০১৬ সালে মামলাটি চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে আসার পর এখন পর্যন্ত সাক্ষী দিয়েছেন ১১ জন।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার