ফেনীর সোনাগাজীতে যৌন হয়রানির অভিযোগকারী নুসরাত জাহান ওরফে রাফি (১৮) এক ছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে দুর্বৃত্তরা। দগ্ধ সেই ছাত্রীর অবস্থা এখন আশঙ্কাজনক। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের আইসিইউতে রাখা হয়েছে। তার চিকিৎসার জন্য ৮ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
এর আগে পরীক্ষা দিতে গেলে আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রের ভিতর তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। গতকাল সকালে পৌর শহরের সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। ওই ছাত্রী সোনাগাজী পৌরসভার চরচান্দিয়া গ্রামের এ কে এম মুসার মেয়ে।
ছাত্রীর ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, গতকাল সকালে আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা ছিল। তিনি তার বোন নুসরাতকে নিয়ে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান। ওই সময় কয়েকজন ছাত্র ও অফিস সহকারী মো. মোস্তফা তাকে মাদ্রাসায় ঢুকতে বাধা দেন। পরে তিনি তার বোনকে মাদ্রাসায় ঢুকিয়ে দিয়ে চলে যান। এর আগে ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা তার শ্লীলতাহানি করেন। এ অভিযোগে মামলা হয়েছে। ওই মামলায় অধ্যক্ষ এখনো কারাগারে। ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে আসছিল। আরেকটি অংশ অধ্যক্ষের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করে।
মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার পক্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী নুসরাতকে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে যায়। তারা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিতে তাকে চাপ দেয়। এ সময় নুসরাত কিছু না বলায় তিনজন শিক্ষার্থী তার হাত ধরে আর অন্য একজন তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
তার চিৎকারে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠান। সেখান থেকে আজ আইসিউতে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ফেনী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. আবু তাহের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ছাত্রীর শরীরের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে মাদ্রাসার কোনো শিক্ষক-কর্মচারী কথা বলতে রাজি হননি।
তবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার সময় তিনি মাদ্রাসার অফিস কক্ষে প্রশ্নপত্র হলে পাঠানোর জন্য তৈরি করছিলেন। চিৎকার শুনে বেরিয়ে এসে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় এক পরীক্ষার্থীকে দেখতে পেয়ে বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোহেল পারভেজ, সোনাগাজী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) সাইকুল আহমেদ ভূঁইয়া, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোয়াজ্জেম হোসেনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ঘটনাটি পুলিশ খুব গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছে। এ ঘটনায় কে বা কারা জড়িত তা তদন্ত করে বের করা হবে।
প্রসঙ্গত, ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগে অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে ওই ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল