‘বাংলাদেশের দক্ষিণে বিশাল জলরাশির নিচে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক সম্পদ। এসব সম্পদ আহরণে এখনও বড় আকারে কোনো গবেষণা করা হয়নি। তাই দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আনতে সমুদ্রে ব্যাপকভাবে অনুসন্ধান, জরিপ ও গবেষণার উপর গুরুত্ব দিতে হবে।’
বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে ‘সাসটেইন্যাবল ব্লু ইকোনমি ফর দ্য ডেভেলপমেন্ট অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক দিনব্যাপী এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ. মান্নান। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগ, গ্রীনটেক ফাউন্ডেশন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ মেরিটাইম রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট যৌথ উদ্যোগে এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশির নিচে প্রচুর সম্পদ রয়েছে। এসব সামুদ্রিক সম্পদ সম্পর্কে আমাদের পর্যাপ্ত ধারণা এবং তথ্য নেই। এসব সম্পদ আহরণের জন্য আমাদেরকে ব্যাপকভাবে অনুসন্ধান, জরিপ ও গবেষণা করতে হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে। তারই নেতৃত্বে আমরা জলে, স্থলে ও আকাশে সর্বত্র বিচরণ করছি। এই সমুদ্র আমাদের অর্থনীতির উন্নয়নের নতুন দিগন্ত। তিনি সামুদ্রিক সম্পদ আহরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা ও প্রকল্প প্রণয়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান। এ ধরনের গবেষণাকর্মে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাসও দেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, সমুদ্র অর্থনীতি বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকতে পারে না। সমুদ্রে বাংলাদেশের বিশাল আয়তনের জায়গা রয়েছে। সামুদ্রিক সম্পদকে কাজে লাগাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছে। বাংলাদেশের উন্নয়নে ব্লু ইকোনমিকে তুলে ধরতে আমাদের একটি মাস্টারপ্ল্যান আছে। এজন্যে আমাদের সমুদ্র অর্থনীতির উপর একটি ভালো জরিপ প্রয়োজন। কীভাবে আমাদের এই সম্পদকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়, তার জন্য উদ্ভাবনী গবেষণা চালিয়ে যাবে আমাদের শিক্ষার্থীরা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কাউসার আহাম্মদ। এতে তিনি সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধানে একটি নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয় বা অধিদফতর অথবা একটি কমিশন গঠনের আহ্বান জানান। সমুদ্রে অনুসন্ধান ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য একটি জাহাজের প্রয়োজনীয়তাও উল্লেখ করা হয়।
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকাস্থ জার্মান দূতাবাসের উপ-প্রধান মাইকেল সুলথেইস, গ্রীনটেক ফাউন্ডেশন-এর নির্বাহী পরিচালক লুৎফর রহমান এবং সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মো. জোবায়ের আলম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘ব্লু ইকোনমি’ নামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
সম্মেলনের পৃথক একটি অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জনাব আশরাফ আলী খান খসরু। তিনি বলেন, আমাদের অর্থের অভাব নেই। কিন্তু আজকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করতে গেলে যে জিনিসগুলো দরকার, যাদের মাধ্যমে আবিষ্কার করতে পারবো, যে অভিজ্ঞতা দরকার, তার অভাব রয়েছে। দেশকে এগিয়ে নিতে, দেশের সাধারণ মানুষের উপকারে আসে এমন উদ্ভাবনে যা কিছু প্রয়োজন তার জন্য সরকারের দ্বার উন্মুক্ত রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন