একদিকে যানজট অন্যদিকে প্রচণ্ড গরম! চরম ভোগান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরছে উত্তরাঞ্চলের ঈদে ঘরমুখো মানুষ। প্রচণ্ড গরমে ট্রাকে ও ছাদে থাকা ঘরমুখ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। শুধু রুটি-কলা খেয়ে টানা ১৫-২০ ঘন্টা গাড়ীতে বসে থেকে কাহিল হয়ে পড়ছে। তবুও নাড়ীর টানে ঘরে ফিরছে তারা। তবে আর মাত্র কয়েকঘন্টা পরেই ঈদ। যানজটের কারণে সময়মত ফিরতে পারবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে।
জানা যায়, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জ মহাসড়ক। এ মহাসড়ক দিয়ে উত্তর-দক্ষিনবঙ্গের প্রায় ২২ জেলার মানুষ ঈদে ঘরে। প্রতিবছরই মহাসড়কের সিরাজগঞ্জ অংশের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিমপাড় থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দেয়। এতে ভোগান্তি পড়তে হয় যাত্রীদের। ঢাকা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ফোরলেন হওয়ায় ওই অংশটুকুতে দ্রুতগতি যানবাহনগুলো এলেঙ্গা এসে একলেনে ঢুকে পড়ে। এতে একলেনে গাড়ির চাপ বেড়ে গিয়ে গাড়ির গতি কমে যায়। সিরাজগঞ্জের নলকা ও হাটিকুমরুল এলাকার দুটি ঝুকিপূর্ণ সরু সেতুতে উঠার সময় গাড়ির গতি একেবারে কমাতে হয়। এ কােণে যানবাহনগুলো বাম্পার টু বাম্পার লেগে কচ্ছপ গতিতে চালাতে হয়। এছাড়াও ছোট ছোট দুর্ঘটনা হলে গাড়ি মহাসড়কের দু'পাশে আটকে যায়। ফলে দীর্ঘযানজট দেখা দেয়। এতে দুর্ভোগ আরো বেড়ে যায়।
আজও সকাল থেকে কখনো ধীরগতি আবার কখনো আধাঘণ্টা থেমেছিল যানবাহনগুলো। এছাড়াও রোদে পুড়ে যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস-ট্রাকের ছাদে ও পিক-আপে বাড়ি ফিরছে। সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনায় রয়েছে নারী শিশুরা। না আছে খাবারের ব্যবস্থা, না আছে টয়লেটে যাওয়ার কোনো সুযোগ। ট্রাকে যাত্রীদের অনেককে অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখা গেছে। সঙ্গীরা তাদের মাথায় পানি ঢেলে এবং হাতপাখার বাতাস দিয়ে যাচ্ছেন। সবমিলিয়ে বিড়ম্বনা ও অস্বস্তির রোদ পুরে ঘরে ফিরতে হচ্ছে ঈদে ঘরমুখো মানুষদের। তবে যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশ ও র্যাবের তৎপরতা ছিল।
মহাসড়কের সয়দাবাদ মুলিবাড়ি চেক পোষ্ট এলাকায় কথা হয় বেশ কয়েক পরিবহন শ্রমিকের সঙ্গে। তারা বলেন, শনিবার রাত ১১টায় ঢাকা থেকে গাড়ি ছেড়েছি। বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড় পুরো যানজটের মধ্য দিয়ে আসলেও সেতু পার হওয়ার পর যানজট কিছুটা কম। তবে একেবারেই ধীর গতিতে চলছে গাড়ি ।
মমনিুর রহমান নামের এক যাত্রী জানান, রাত ৮টায় ঢাকার গাবতলী থেকে বাসে উঠেছি, যাব বগুড়ায় এখন ২টা বাজে মাত্র সিরাগঞ্জের সয়দাবাদ এলাকায় আসছি এখানে এসেও যানজটের মধ্যে পরে আছি।
রাজশাহীগামি যাত্রী মারিয়া সুলতানা বলেন, রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকা থেকে বাসে উঠেছে সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড়ে আসছি ১৬ ঘন্টায়। রাজশাহী যেতে যে আর কত সময় লাগবে বুঝতে পারছি না। এদিকে খাবার ব্যবস্থা না থাকায় শুধু রুটি-কলা খেয়ে টানা ১৬ ঘণ্টা গাড়িতে বসে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হল টয়লেট ব্যবস্থা না থাকায় খুবই সমস্যা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তী জানান, মহাসড়কে যানজট নিরসনে আমার কাজ করে যাচ্ছি। মহাসড়কে যানবহনের চাপ বেশি থাকায় ধীরগতিতে যান চলাচল করছে। পুলিশ-র্যাব কর্মীরা যানজন নিরসনের পাশাপাশি ঈদে ঘরে ফেরা মানুষ যেন কোন ভোগান্তিতে না পড়ে সে জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে হাটিকুমরুল গোলচত্বর থেকে রাজশাহী, বগুড়া ও পাবনাগামী মহাসড়কে যানজট নেই। কিন্তু মাঝে মাঝে যানবাহন ধীর গতির মুখে পড়ছে।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ