আজ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে অন্যতম একটি দিন। সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায় দিনটি। স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধের সূচনার এই সময়টি জাতি আবেগের সঙ্গে স্মরণ করে। কিন্তু এবার এমন এক সময়ে ৪৯তম স্বাধীনতা দিবস সামনে এল, যখন নভেল করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব আক্রান্ত।
এই কারণে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোসহ সব জাতীয় কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও স্বাধীনতা দিবসের সব কর্মসূচি বাতিল করেছে। কর্মসূচি বাতিল হলেও স্বাধীনতার এই দিনে বাঙালি জাতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করছে দেশমাতৃকার জন্য আত্মদান করা বীর সন্তানদের।
করোনার কারণে এবার স্মৃতিসৌধে মানুষের ঢল নামেনি, ফুল হাতে দেখা মেলেনি এ প্রজন্মের ছোট্ট শিশুটিকেও; যে কিনা যুদ্ধ দেখেনি কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চায়।
নিস্তব্ধ জাতীয় স্মৃতিসৌধ। সরজমিনে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে দেখা যায়, সুনশান পরিবেশ বিরাজ করছে। অন্যান্য বছর এই সময়ে যেখানে মানুষের জন্য হাঁটা পর্যন্ত দায়, সেখানে এবার জনশূন্য পরিবেশ। স্মৃতিসৌধের প্রধান প্রবেশপথ তালা দেওয়া ও দ্বিতীয় পথে এক নিরাপত্তাকর্মী বসে অলস সময় পাড় করছেন। বন্ধ রয়েছে স্মৃতিসৌধের ফোয়ারাও। প্রধান বেদিতে নেই কোনো ফুল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের জন্য গত ১৬ মার্চ থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ জনসাধারণের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে গত ১৭ মার্চ স্মৃতিসৌধ ধোয়া-মুছা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছিল। কিন্তু ২১ মার্চ করোনা সংক্রমণ রোধে জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় নিয়ে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ সব কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। এ কারণে স্মৃতিসৌধের সব কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
প্রতিবছর প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এরপর থেকে সবস্তরের মানুষ ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রধান অনুষ্ঠান জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকেন। এবছর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনার মহামারির কারণে এ কর্মসূচিটি বাতিল করা হয়েছে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের অফিস সহকারী মো. আবুল বাশার বলেন, এবার এমন এক সময়ে ৪৯তম স্বাধীনতা দিবস সামনে এল, যখন নভেল করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব আক্রান্ত হয়েছে। এই কারণে এখানে স্মৃতিসৌধ স্থাপনের পর এবারই প্রথম শ্রদ্ধা নিবেদন করতে কোনো লোক আসেননি।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, এই ভাইরাস যাতে দেশব্যাপি ছড়িয়ে পড়তে না পারে তার জন্য জনসমাবেশ ঘটে এমন কর্মসূচিও আমরা বাতিল করবো। অন্যের জীবন বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া ঠিক নয় এবং আমি আশা করছি আপনারা এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। স্বাধীনতা দিবসের জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে এবার দিবসটির সব কার্যক্রম বাতিল করা হয়েছে।
আশুলিয়ার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ রিজাউল হক দিপু বলেন করোনা ভাইরাসের সুযোগ নিয়ে কেউ যেন অন্য রকম চিন্তা করতে না পারে সেদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ বাড়ানো হয়েছে সর্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারী। সাভারের আমিনবাজার থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত কয়েকটি স্তরের নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়েছে। সৌধ এলাকায় নিরাপত্তা চৌকি, পর্যবেক্ষণ বসানোর পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য সাদা পোশাকে পুলিশের নজরদারী বাড়নোর পাশাপাশি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল