আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আর কারিগরি জটিলতা দেখা না দিলে আগামীকাল শুক্রবার সকালেই পদ্মা সেতুর পিলারে বসবে ৩৬তম স্প্যান ওয়ান-বি। ৩৬তম এই স্প্যানটি বসানো হবে সেতুর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের ২ ও ৩ নম্বর পিলারের ওপর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়চেতা মনোবল আর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নিবিড় পর্যবেক্ষণে এবং দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের প্রচেষ্টায় একের পর এক স্প্যান পিলারে বসে দৃশ্যমান হতে চলেছে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতু।
৩৬তম স্প্যানটি স্থায়ীভাবে বসানো হলে দৃশ্যমান হবে সেতুর ৫ হাজার ৪০০ মিটার অংশ। গেল মাসে পদ্মা সেতুতে চারটি স্প্যান বসানো হয়েছে যা প্রকৌশলীদের বড় একটি সাফল্য এবং দেশবাসীর স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথকে সুগম করেছে। চলতি মাসেও চারটি স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা আছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এ কথা জানান সেতুমন্ত্রীর সিনিয়র জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসের।
প্রকৌশলীদের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়ার কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ভাসমান ক্রেন তিআনই ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের স্প্যানটি পাজা করে নিয়ে যায় নির্ধারিত পিলারের কাছে। পরে সেখানে অবস্থান করে সবকিছু ঠিকঠাক করা হয় এবং শুক্রবার সকালে তা ২ ও ৩ নম্বর পিলারের উপর বসানো হবে। ২-৩ নম্বর পিলারের অবস্থান মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের পদ্মা নদীর একেবারে তীরের কাছাকাছি। ইতোমধ্যে ৩ হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার ভাসমান ক্রেনটি পিলারের কাছে আসার জন্য কিছুটা ড্রেজিং করা হয়। এছাড়া সব ধরনের প্রস্তুতিও গ্রহণ করা হয়। নোঙর করতেও খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ২-৩ নম্বর পিলারের দূরত্ব খুব বেশি না থাকায় ২৫-৩০ মিনিট সময়ের মধ্যেই নির্দিষ্টস্থানে নিতে সক্ষম হয়।
অন্যদিকে পদ্মা সেতুতে আর মাত্র থাকবে ৫টি স্প্যান বসানোর কাজ। বাকী ৫টি স্প্যানের মধ্যে আগামী ১১ নভেম্বর পিলার ৯ ও ১০ নম্বরে ৩৭তম স্প্যান (২-সি), ১৬ নভেম্বর পিলার ১ ও ২ নম্বরে ৩৮তম স্প্যান (১-এ), ২৩ নভেম্বর পিলার ১০ ও ১১ নম্বরে ৩৯তম স্প্যান (২-ডি), ২ ডিসেম্বর পিলার ১১ ও ১২ নম্বরে ৪০তম স্প্যান (২-ই) ও ১০ ডিসেম্বর সর্বশেষ ৪১ নম্বর স্প্যান (২-এফ) বসবে ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পুরো পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮২ শতাংশ। নদী শাসন কাজের অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ। মূল সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগতি এখন ৯০.৫০ শতাংশ পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে সফলভাবে।
পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে। মূল সেতুর দুই হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে ১ হাজার ১৬৬টির বেশি বসানো হয়েছে। দুই হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে ১ হাজার ৬৪৬টির বেশি স্ল্যাব বসানো হয়েছে। মাওয়া ও জাজিরা ভায়াডাক্টে ৪৮৪টি সুপার টি গার্ডারের মধ্যে ২৫৮টি স্থাপন করা হয়েছে। স্প্যান বসানোর পাশাপাশি স্ল্যাব বসানোর কাজও এগিয়ে চলছে। বন্যা ও করোনা পরিস্থিতিতে চারমাস স্প্যান বসানো না গেলেও অক্টোবর মাসে চারটি স্প্যান বসানো হয়। স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে মোট ৪২টি পিলারে বসানো হবে। তার মধ্যে ৪১টি স্প্যান পিলারে বসে ৬, ১৫০ মিটার (৬.১৫ কিলোমিটার) সেতু বাস্তবে রূপ নেবে।
মূল সেতু নির্মাণের কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (এমবিইসি) ও নদী শাসনের কাজ করছে চীনের আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৯৯ ব্রিগেড কমান্ড। দেশবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের অপেক্ষায় প্রহর গুণছে দক্ষিণবঙ্গের ২ জেলার মানুষসহ দেশবাসী। এ সেতু বাস্তবায়িত হলে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন