বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় এবারও বাংলাদেশে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে উদযাপিত হচ্ছে বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুরে একটি ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও স্বাগত বক্তব্যদানকারী হিসেবে ছিলেন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) দুলাল কৃষ্ণ সাহা।
এ সময় আরও যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের সচিবসহ, বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, শিল্প দক্ষতা পরিষদের প্রতিনিধি ও উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিনিধিবৃন্দ।
ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, “দ্বিতীয়বারের মত কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস। মহামারীর পরবর্তী সময়ে পেশার পরিবর্তন ও বিপুল সংখ্যক কর্মহীন মানুষের জন্য দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রদান ও কর্মের সুযোগ সৃষ্টির বিষয়টি সামনের দিনগুলোতে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে। সে প্রেক্ষিতে চাহিদার পাশাপাশি যোগান ভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদানে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিককে সমৃদ্ধ করতে বিশ্বে দক্ষতা প্রশিক্ষণের ব্যাপ্তি, ভিন্নতা ও ক্ষেত্র চিহ্নিত করে যুবদের দক্ষতা বাড়াতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে শ্রমবাজারে দক্ষ জনশক্তির ব্যাপক চাহিদার বিপরীতে জনশক্তির যোগান বাংলাদেশের সামনে বিপুল সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে দক্ষতা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দক্ষতা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা বিরাজ করছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য দক্ষতা-সংশ্লিষ্ট সকল অংশ গ্রহণকারীকে ভাবতে হবে এবং সে অনুযায়ী অতিসত্ত্বর পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।”
প্রতিবছর ১৫ জুলাই এ দিবসটি পালিত হয়। ইউনেস্কো-ইউনিভোক কর্তৃক বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে ‘Reimagining Youth Skills Post Pandemic’। দিবসটি পালনের মূল লক্ষ্য হলো, যুবদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান করে কর্মসংস্থানের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলা এবং কর্মসংস্থান, শোভন কাজ ও উদ্যোক্তা তৈরিসহ বর্তমান ও ভবিষ্যতের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যুবদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি যুবদের উদ্দেশে বলেন, “শিক্ষার পাশাপাশি, বিশেষ করে করোনা মহামারীর এই সময়ে, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদার ভিত্তিতে দক্ষতা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ভবিষ্যতে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে হবে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “মহামারীর কারণে সারা বিশ্বেই দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রদান মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে, অনেক কলকারখানা বন্ধ হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাটাই করতে বাধ্য হয়েছে। ফলে কর্মে নিয়োজিত কেউ কেউ বেকার হয়ে পড়েছেন। পাশাপাশি মহামারীর এই সময়ে কিংবা মহামারী পরবর্তী সময়ে পেশার ক্ষেত্রে ভিন্নতা আসতে পারে। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে-ভিন্ন পেশার জন্য দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রদান, কর্মহীন হয়ে পড়া কর্মীদের জন্য রি-স্কিলিং ও আপ-স্কিলিং এর ব্যবস্থা, পূর্ব অভিজ্ঞতার স্বীকৃতি (RPL) ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরিকল্পনা প্রণয়নের পাশাপাশি নতুন পেশার জন্য যোগ্যতাভিত্তিক কারিকুলাম প্রণয়ন, শিল্পসংযোগ ইত্যাদি বিষয়েও পরিকল্পনা প্রয়োজন।”
এ সময় অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে মো. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, “মহামারীকালীন মানুষ ব্যাপকভাবে ডিজিটাল প্লাটফর্ম-নির্ভর হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশে এটি অভাবনীয় আশার সঞ্চার করেছে। বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সিং-এর মাধ্যমে আয়ের পথ সুগম হয়েছে। পাশাপাশি দেশের ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের বিদ্যমান চাহিদার কথা বিবেচনা করে বিশাল যুব জনগোষ্ঠীকে উপযুক্ত দক্ষতা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তুলতে হবে। প্রযুক্তির সাথে খাপ-খাওয়াতে দরকার দক্ষতা উন্নয়নে নতুন নতুন পাঠ্যক্রম প্রণয়ন এবং এর মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তির বিষয় প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্ত করা। ফলে দক্ষ জনবল তৈরির মাধ্যমে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ অর্জন সহজতর হবে।”
আলোচনা সভার স্বাগত বক্তব্যে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, “২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উপনীত হওয়া বর্তমান সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা। করোনা মহামারীর মধ্যে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নিরলসভাবে কাজ করছে।”
তিনি আশা করেন যে, “আগামী তিন মাসের মধ্যে ফ্রিল্যান্সারদের সনদায়ন কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।”
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন