রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে চলছে অগ্রিম টিকিট বিক্রি। টিকিট বিক্রির দ্বিতীয় দিন আজ রবিবার দেওয়া হচ্ছে ২৮ এপ্রিলের টিকিট। কিন্তু টিকিট কাটতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। টিকিট কাটার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কিন্তু রাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও কাঙ্ক্ষিত সেই টিকিট পাচ্ছেন না বলে তারা অভিযোগ করেছেন অনেকেই।
ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি প্রথম দিন গতকাল শনিবার (২৩ এপ্রিল) কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যে পরিমাণ ভিড় ছিল তার চেয়ে দ্বিগুণ ভিড় রয়েছে আজ। এদিম সকালে দ্বিতীয় দিনের মতো ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। ভোর থেকেই কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছেন টিকিটপ্রত্যাশীরা। আবার অনেকে রাত থেকেই দাঁড়িয়েছেন।
কমলাপুর রেলস্টেশনে টিকিট কেনার পর মতিউর রহমান নামের এক ব্যক্তি জানান, ১৯ ঘণ্টা লাইনে থাকার পর টিকিট পেলাম। ইফতারি-সাহরি দুটোই লাইনে দাঁড়িয়ে করেছি। কখনো দাঁড়িয়ে কখনো বসে এভাবেই কেটেছে সময়। তবে হাতে টিকিট পাওয়ার পর সব ক্লান্তি আর দুর্ভোগ ভুলে উচ্ছ্বসিত তিনি। টিকিট হাতে নিয়ে তিনি বলেন, এত কষ্টের পর টিকিট হাতে পেয়ে এখন ভালো লাগছে।
মতিউর রহমান আরও জানান, গত দুই বছর করোনার কারণে গ্রামের বাড়ি নীলফামারী গিয়ে ঈদ করতে পারেননি। তাই এবার শনিবার (২৩ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় এসে ট্রেনের টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়ান তিনি। প্রায় ১৯ ঘণ্টা পর পরের দিন আজ রবিবার সকাল পৌনে ১০টায় কাউন্টার থেকে হাতে পান কাঙ্ক্ষিত টিকিট।
শুধু মতিউর রহমান নন, তার মতো হাজার হাজার মানুষ রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে ট্রেনের টিকিট পেতে অপেক্ষা করছেন। ঢাবির শহীদুল্লাহ হলের ছাত্র নয়ন বলেন, রাত ৩টার পর আরেক বন্ধুসহ টিকিটের জন্য এসেছেন। টিকিটের লাইন দিয়ে স্টেশনের পাশেই সেহরি খেয়েছেন। সাড়ে দশটায় টিকিট পেয়েছেন।
রামপুরার বাসিন্দা শিমুল মিয়া যাবেন চুয়াডাঙা। তিনি বলেন, দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে যখন কাউন্টারে গেলাম, তখন জানতে পারলাম, এসির টিকিট নাই। পরে শোভন চেয়ার টিকিট নিয়েছি।
আরেক যাত্রী শহীদুল্লাহ যাবেন যশোর। তিনি বলেন, সুন্দরবন এক্সপ্রেসের টিকিট পেয়েছি। তবে টিকিট পেতে লাইনে থাকতে হয়েছে ৭ ঘণ্টার মতো। এসি টিকিট পাইনি, শুধু শোভনের টিকিট পেয়েছি।
কমলাপুর রেলস্টেশনে কথা হয় মো. মাহির নামে আরেক টিকিটপ্রত্যাশীর সঙ্গে। তিনি খুলনা যাওয়ার টিকিট নিতে এসেছেন। তিনি জানান, গতকাল শনিবার টিকিট পাইনি, একই লাইনে আজও দাঁড়িয়ে আছি। ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, টিকিট পাওয়াটাই এখন কঠিন হয়ে গেছে। রাত ৩টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছি। এখনো অনেক মানুষ সামনে। পরিবার নিয়ে গ্রামে যাওয়াই কঠিন হয়ে যায় ঈদে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, 'টিকিট যার ভ্রমণ তার’ নিশ্চিত করতে যাত্রীদের এনআইডি বা জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি কাউন্টারে দেখিয়ে টিকিট কিনতে হচ্ছে। যাত্রীর চাপ কমাতে ঢাকা শহরের পাঁচটি কেন্দ্রে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। কমলাপুর, ঢাকা বিমানবন্দর, তেজগাঁও, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ও ফুলবাড়িয়ায় (পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন) টিকিট বিক্রি করা হবে। একজন যাত্রী একসঙ্গে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কিনতে পারবেন। ঈদের অগ্রিম বিক্রিত টিকিট ফেরত নেওয়া হবে না। এবার ২৮ এপ্রিলের টিকিট দেওয়া হবে আজ ২৪ এপ্রিল (রবিবার), এভাবে ২৯ এপ্রিলের টিকিট ২৫ এপ্রিল (সোমবার), ৩০ এপ্রিলের টিকিট ২৬ এপ্রিল (মঙ্গলবার) এবং ১ মে এরর টিকিট ২৭ এপ্রিল (বুধবার) বিক্রি করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ