বিএনপি-জামায়াতের কর্মকাণ্ড পাকিস্তানি দূতাবাস থেকে মনিটরিং করা হয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত কখনো বিছিন্ন হবে না। জামায়াতের আমির বলেছেন তারা যুগপৎ আন্দোলনে থাকবে। এটি তাদের রাজনৈতিক কৌশল। একাত্তরে জামায়াত, পঁচাত্তরে জিয়া পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছে। এখনও তাদের উত্তরসূরিরা একই কাজ করছে।
রবিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার হলে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ আয়োজিত জাতির পিতাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ও ১৫ আগস্টের সকল শহীদ স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে এসব কথা বলেন হানিফ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে হলে পাকিস্তানের এ টিম, বি টিম বিএনপি-জামায়াতকে কোণঠাসা করে রাজনীতি থেকে নির্মূল করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের প্রেতাত্মা বিএনপি-জামায়াতকে যতদিন নিশ্চিহ্ন না করা হবে ততদিন তারা ষড়যন্ত্র করে দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করবে। বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি করার নৈতিক অধিকার থাকতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ২০০৪ সালে তারেক রহমান বলেছে-ছাত্রদল, ছাত্রশিবির একই মায়ের পেটের দুই ভাই। তারা একই জায়গা থেকে তৈরি, পাকিস্তানের আদর্শে বিশ্বাসী।
আওয়ামী লীগ সরকার টর্চার সেল বানিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্যাতন করছে, বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগের জবাবে আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল আয়নাঘর নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলছেন-সরকার টর্চার সেল করে বিএনপি নেতাদের নির্যাতন করছে। আবার বলছেন-২০০৭ সালে তারেক রহমানকে গ্রেফতার করেও এখানে নির্যাতন করা হয়েছে। অথচ সেই সময়ে সামরিক বাহিনী দেশ চালাচ্ছিল। তাহলে আমরা কোনটা বিশ্বাস করব? মূলত বিএনপির সময়ে আয়নাঘর তৈরি হয়েছে, তারা তৈরি করেছে।
হানিফ বলেন, গাজীপুরের মালয়েশিয়া প্রবাসী এক ছেলে সেলিমকে দিয়ে মিথ্যাচার করে ভিডিও ছাড়া হয়েছে। সরকার গ্রেফতার করলে বিএনপির সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতো। একজন প্রবাসীকে গ্রেফতার করা আওয়ামী লীগের কি দরকার? বিএনপি নেতারা এসব নিয়ে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছে।
বাংলাদেশে গুম, খুনের রাজনীতি জিয়াউর রহমান শুরু করেছে উল্লেখ করে হানিফ বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সামরিক বাহিনীর ১২০০ সদস্যকে বিনা বিচারে ফাঁসি দিয়েছে। তাদের অপরাধ ছিল তারা মুক্তিযোদ্ধা। চট্টগ্রামের মৌলভী সৈয়দকে জয়েন্ট ইন্টিগ্রেশন সেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছিল। তার লাশও পাওয়া যায়নি।
দেশের প্রতি বিএনপির কমিটমেন্ট কোন জায়গায় এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, প্রশাসনের কয়েকজনের উপর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা আসলো। এখন পুলিশ প্রধান ভিসা পেয়ে আমেরিকা যাচ্ছে। বিএনপি হতাশ। যেই আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, সেই আমেরিকা ভিসা দিয়েছে এতে বিএনপি কেন কষ্ট লাগছে? আসলে এদের প্রভু পাকিস্তান। তারা দেশের উন্নয়ন দেখতে চায় না। বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ রাষ্ট্র বানাতে চায়।
হানিফ বলেন, ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কময় দিন। ক্ষমতা দখলের হত্যাকাণ্ড ছিল না। নিরীহ সদস্যরা হত্যার শিকার হয়েছে এ নজির পৃথিবীতে আরনেই। একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তাকে সপরিবার হত্যা করা হয়।
বঙ্গবন্ধু বিশ্ববন্ধু ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সবসময় শোষিত মানুষের পক্ষে ছিলেন। তিনি ছিলেন জনগণের নেতা। সদ্য স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রনায়ককে নিয়ে বিশ্বের নেতারা উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। দুর্ভাগ্য আমাদের বাঙালি জাতি সেই মূল্যায়ন ধরে রাখতে পারেনি।
তিনি বলেন, কিছু বিপদগামী সৈন্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে এটা সত্য, কিন্তু এর মূল চক্রান্ত করেছে পাকিস্তান ও তাদের পশ্চিমা মিত্র। তার বাইরেওমূল চক্রান্তাকারী ছিল। দেশ থেকে বিভেদ দূর করতে হলে যারা বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে ছিল তাদের মুখোশ উন্মাোচন করা প্রয়োজন।
হানিফ অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যায় পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেছে। রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে দেশে পাকিস্তানি আদর্শ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যায় নেপথ্যে থেকে মূল হিসেবে কাজ করেছে।
তিনি বলেন, বিএনপি দাবি করে তারা মুক্তিযোদ্ধার দল অথচ এই বিএনপি ক্ষমতা দখল করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্মৃতি, অর্জন সব ধ্বংস করেছে। তাদের প্রতিষ্ঠাতা জিয়া ক্ষমতা দখল করে ৭ মার্চের ভাষণ, জয় বাংলা নিষিদ্ধ করেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের যে জায়গায় পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল সেই চিহ্ন মুছে দিতে শিশু পার্ক বানিয়েছিল। পাকিস্তানের পরাজয়ের কালিমা রাখতে দেয়নি। যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দিয়েছে, রাজাকারদের দিয়ে মন্ত্রীসভা গঠন করেছে। রাজাকার গোলাম আজমকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছে।
বিএনপি এখনও পাকিস্তানের আদর্শ অনুসরণ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি দেশের উন্নয়ন হলে খুশী হয় না। তারা ক্ষমতায় থাকতে কোনো কিছু করতে পারেনি উল্টো দেশকে ব্যর্থ, জঙ্গীরাষ্ট্র বানিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা অন্ধকারে থাকা দেশকে আলোয় উদ্ভাসিত করেছেন। উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে মিথ্যাচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে উসকে দিচ্ছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর বলেন, স্বাধীনতার অব্যাহিত পরে জাতির পিতা বঙ্গববন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রযুক্তি, কৃষি, শিক্ষা, বিদ্যুৎসহ প্রতিটি সেক্টরের উন্নয়ন, অগ্রগতিতে দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধু বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ স্থাপন করেছিলেন, যার কারণে আজ আমরা ৫ জি যুগে প্রবেশ করেছি।
যেকোনো সংকটে প্রকৌশলীরা বঙ্গবন্ধুকন্যার পাশে থাকবেন এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে অভাবনীয় জায়গায় নিয়ে গেছেন। যখনই নির্বাচন আসে বিএনপি-জামায়াত জঙ্গীগোষ্ঠী উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। এদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মো. মনোয়ার হোসেন চৌধুরী এমপি এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. নূরুল হুদা।
সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ সভাপতি অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার এম. হাবিবুর রহমান। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইইবি সহকারী সাধারণ সম্পাদক মো. রনক আহসান।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন