আবারও ফুটবল উন্মাদনা। গ্যালারির টিকিট বিক্রি শুরুর পর এক ঘণ্টাতেই সব শেষ। ৯ অক্টোবর ঢাকায় এশিয়া কাপ বাছাইপর্ব লড়াইয়ে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হংকং। ম্যাচের যেখানে এক সপ্তাহের বেশি বাকি, সেখানে এক ঘণ্টায় টিকিট সব শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রমাণ মেলে জাতীয় দলের ম্যাচ ঘিরে কতই না আগ্রহ। অবশ্য এত উন্মাদনার মূল কারণ হচ্ছে হামজা দেওয়ান চৌধুরী, সামিত সোম ও ফাহমিদুল ইসলাম। আরেক প্রবাসী জায়ান আহমেদের হংকংয়ের বিপক্ষে অভিষেক হতে পারে। প্রবাসীরা জাতীয় দলে নাম লেখানোর পরই দেশের ফুটবলে দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। এরা খেলাতে বাংলাদেশের শক্তিও বেড়েছে। বিশেষ করে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের হামজার ওপর আস্থা অন্য রকম।
এত উত্তেজনা, এত উন্মাদনা এরপরও তো জয় আসছে না। হামজারা খেলার পরও ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে থাকবে তা কি মানা যায়? বাছাইপর্বের গ্রুপের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে শুধু হামজা খেলেছিলেন। পরে ঘরের মাঠে হামজা, সামিত ও ফাহমিদুল খেলেছিলেন। এতে কেউ কেউ বলছেন, মানসম্পন্ন প্রবাসী খেলার পরও জয় না আসে তাহলে এত ঢাকঢোল পিটিয়ে তাদের গায়ে লাল-সবুজের জার্সি পরানো হলো কেন? আবার এটাও বলা হচ্ছে, এতদিনের ধ্বংসস্তূপ হুট করে মেরামত করা সম্ভব কি? সময় তো লাগবেই। কিন্তু ‘সি’ গ্রুপে দুই ম্যাচে পাঁচ পয়েন্ট হারিয়ে অবস্থা নাজুকই বলা যায়। পরবর্তী রাউন্ডে যেতে হলে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে দুই ম্যাচে হংকংকে হারাতে হবে।
এশিয়ান কাপের ইতিহাসে বাংলাদেশ একবারই বাছাই পেরিয়ে চূড়ান্ত পর্বে খেলেছিল। তা ১৯৮০ সালে। সেই ৪৫ বছরের আগের ঘটনা। এরপর ব্যর্থতা ছাড়া জাতীয় দল কিছুই দিতে পারেনি। হামজারা খেলার পরও একই পরিণতি ঘটলে তাহলে লাভ হলো কি? ৯ অক্টোবর হামজা, সামিত, ফাহমিদুল ছাড়াও জায়ানের অভিষেক হতে চলেছে তা ধরে নেওয়া হচ্ছে। সঙ্গে থাকবেন স্থানীয় তারকা ফুটবলাররা। এরপরও জয়ের দেখা মিলবে কি? ফুটবলপ্রেমীরা প্রত্যাশা করছেন আগের দুই ম্যাচে যা ঘটুক, হংকংয়ের বিপক্ষে হামজারা ছন্দময় খেলা খেলে জয়ের পতাকা উড়াবেন। হংকংয়ের বিপক্ষে জেতা কি যাবে না? সত্যি বলতে কি দল হিসেবে তারাও শক্তিশালী। সিঙ্গাপুর ও হংকং দুই ম্যাচে ৪ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে। ভারতের বিপক্ষে জিতেছে আর সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ড্র। সুতরাং প্রতিপক্ষরা কতটা যে শক্তিশালী তা বোঝা যায়। ম্যাচে নামার আগে বাংলাদেশের অনুশীলন গতকাল থেকে শুরু করেছে। হেড কোচ হাভিয়ের কাবরেরা ২৯ সদস্যের প্রাথমিক দল ঘোষণা করেছেন। হামজা, সামিত, ফাহমিদুলরা ঠিক সময়ে এসে পৌঁছাবেন। তারপরও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে সবাইকে নিয়ে হেড কোচ অনুশীলন করাতে পারবেন কি না। কেননা মোহামেডান সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় দলে ডাক পাওয়া তাদের ছয় ফুটবলারকে এখনই ছাড়বে না। নিয়ম মেনেই তারা ৭২ ঘণ্টা আগে খেলোয়াড় ছাড়বে। জানি না মোহামেডানের এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত কি না। কেননা তারা এ ব্যাপারে বাফুফেকে কোনো চিঠি পাঠায়নি। ৯ ও ১৪ অক্টোবর হংকংয়ের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ। দুই ম্যাচে জয় ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। তা না হলে চূড়ান্ত পর্বের স্বপ্ন শেষ। হংকং দল হিসেবেও শক্তিশালী। হামজাদের অগ্নিপরীক্ষা বললেও ভুল হবে না। আবার কোচ কাবরেরার শেষ সুযোগ। বাফুফে যদি দেখে হংকংয়ের বিপক্ষে ভরাডুবি। তাহলে নতুন কোচের সন্ধানে নামবে। সব মিলিয়ে হংকং ম্যাচের উত্তেজনা থাকবে অন্য রকম। নেপালে প্রীতি ম্যাচে না খেলায় শঙ্কা ছিল হামজা ও সামিত এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে খেলবেন কি না। স্বস্তির খবর তারা আসছেন। এখন শুধু এলেই চলবে না দেশকে জেতাতে হবে। তা না হলে সব উন্মাদনা ম্লান হয়ে যাবে।